ইসলামবিরোধী শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে
সেমিনারে হেফাজত নেতাদের আহ্বান- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
‘ইসলামবিরোধী ও জাতীয় মূল্যবোধ পরিপন্থী’ শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্য পুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে নেতারা এ আহ্বান জানান। এতে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, জাতীয় পাঠ্যবই নিয়ে একের পর এক বিতর্ক হচ্ছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কোনো জাতিকে পরাজিত করতে হলে সেই জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করাই যথেষ্ট। তিনি আরো বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আপনাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে হলে এই বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাখ্যানের বিকল্প নেই। দেশের সচেতন অভিভাবকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলামের ব্যাপারে আপনারা আরো সরব হোন। ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যবই প্রত্যাখ্যান করুন। স্কুলে আপনার সন্তানদের কী শেখানো হচ্ছে তা জনসম্মুখে তুলে ধরুন। আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক আজ হিন্দুত্ববাদের কবলে পড়েছে। অঙ্কুরেই মুসলমানের ছেলেমেয়েদের ঈমানী চেতনা ধ্বংস করার আয়োজন করা হচ্ছে। সেকুলারিজমের নাম দিয়ে ইসলাম নির্মূল করার এই চক্রান্ত আমরা সফল হতে দেবো না ইনশা আল্লাহ।
সেমিনারে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান ৭টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সব শাখায় আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষায় ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ পুনর্বহাল করতে হবে। বিতর্কিত ও প্রত্যাখ্যাত কুরআনবিরোধী বিবর্তনবাদ ও ট্রান্সজেন্ডারবাদসহ ইসলামবিরোধী সব পাঠ্য রচনা সিলেবাস থেকে অপসারণ করতে হবে। আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য আরবি ভাষার পাঠদান সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
উল্লেখ্য, ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ উদ্দেশ্যে আরবি ভাষা শিখে এগিয়ে রয়েছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিতকরণপূর্বক অপসারণ করে দেশপ্রেমিক ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যতে বিতর্ক এড়াতে দেশের নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শের আলোকে পাঠ্যবইয়ের পুনঃসংস্করণ করতে হবে। ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের প্রতি আমাদের প্রস্তাব ও যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের আহবান জানাই। একই সাথে দেশের জনগণকে ইসলামবিরোধী ও জাতীয় মূল্যবোধ পরিপন্থী এ শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে হেফাজতের নায়েবে আমির ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সাতটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে ধর্মীয় শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০ কমিটির প্রতিবেদনকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়েছে। অথচ কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ইসলামী আদর্শ বিরোধী এক কালো দলিল। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯ এ কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শিক নৈতিকতা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে রেখে একটি ধর্মবিবর্জিত ইহ জাগতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরির উপযোগী জনবল সৃষ্টিই বর্তমান শিক্ষা কমিটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
সেমিনারে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলনা আতাউল্লাহ আমীন ও মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, নায়েবে আমির সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মুফতি জসিম উদ্দীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা মোবারকুল্লাহ, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা জালালুদ্দীন, মুফতি হারুন বিন ইজহার, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশিরুল্লাহ, ড. আসিফ মাহতাব, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মাওলানা জাবের কাসেমী, মাওলানা এনামুল হক মুসা প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা