১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
৭ মাসে পরিচালন বাজেটের ৪০, উন্নয়নের ২০ ভাগ বাস্তবায়ন

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধেও বাজেট বাস্তবায়নের দুরবস্থা অব্যাহত

-

প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধেও বাজেট বাস্তবায়নের দুরবস্থা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারের পরিচালন ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের ৪০ শতাংশ। আর একই সময়ে উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে বাজেটের বড় একটি অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ দিকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৪.৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে রাজস্বের ৮৫.৭ শতাংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অন্তর্ভুক্ত কর খাত থেকে এসেছে। এনবিআরের মোট কর আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৪.৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুদ প্রদান, কৃষি, শিক্ষা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা এবং বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় খাতের ব্যয় তুলনামূলক বেশি ছিল। বিপরীত দিকে হাউজিং ও জেনারেল পাবলিক সার্ভিসেস (জিপিএস) খাতে কম ব্যয় হয়েছে। অন্য সব বিভাগে অর্থবছর ’২৩-এর প্রকৃত ব্যয়ের থেকে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
বিবেচ্য সাত মাসে অন্য সব বিভাগের মধ্যে সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয় ছিল মোট খরচের সর্বোচ্চ (৩২ শতাংশ)। অন্যান্য খাতে অধিক ব্যয় হয় পাবলিক সার্ভিস (১৭ শতাংশ), শিক্ষা (১৪ শতাংশ), কৃষি (৯ শতাংশ), জন নিরাপত্তা (৭ শতাংশ), প্রতিরক্ষা (৭ শতাংশ) এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে (৬ শতাংশ)।
মোট বার্ষিক বরাদ্দকৃত সম্পদের চেয়ে বিবেচ্য সাত মাসে অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেক্টরে শীর্ষে রয়েছে সুদ খাত। এ খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬৪.২ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায় সাত মাসে। এ ছাড়া কৃষিতে ৬১.৯ শতাংশ, শিক্ষায় ৪৭.৬ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৪৩.৫ শতাংশ এবং বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় খাতে ৪২.৪ শতাংশ বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হয়েছে।
জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত সাত মাসে মোট পরিচালন ব্যয়ের ব্যবহারের হার ছিল মোট বাজেট বরাদ্দের ৪০.২ শতাংশ। এর মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সুদ প্রদান (৬৪ শতাংশ) এবং বেতনভাতার (৪৫ শতাংশ) মতো নির্দিষ্ট কিছু বিভাগে সামগ্রিক ব্যবহারের গড় হার অতিক্রম করেছে। জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত সাত মাসে প্রকৃত ব্যয় ছিল উন্নয়ন বাজেটের ২০.১১ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় খাতে ৪১.৬৭ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক পরিষেবায় ৩১.৩৯ শতাংশ, পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ২৯.২১ শতাংশ বরাদ্দকৃত সম্পদের ব্যবহার হয়। সাধারণ পাবলিক সার্ভিস, স্বাস্থ্য, ডিফেন্স, জ্বালানি ও শক্তির মতো বড় বরাদ্দসহ কিছু সেক্টর গড়ের চেয়ে কম ব্যয় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে মোট রাজস্ব সংগ্রহ ছিল জিডিপির ৮.১৬ শতাংশ। রাজস্ব আদায় হয় সংশোধিত বাজেটের ৮৪.৮ শতাংশ। অন্য দিকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত সাত মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই আদায় ছিল ৪৪.৭ শতাংশ।
অর্থবছর ’২৪-এ, মোট রাজস্ব জিডিপির ৯.৯ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এ অনুমানটি অর্থবছর ’২৩-এর সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ১৫.৪৭ শতাংশ বেশি এবং প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের থেকে ৩৬.৩৩ শতাংশ বেশি।
সরকারের রাজস্বের একটি প্রধান অংশ আসে এনবিআরের উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৮৫.৭ শতাংশ রাজস্ব এসেছে এই খাত থেকে। বিবেচ্য সাত মাসে এনবিআরের খাতগুলোয় রাজস্ব বৃদ্ধির হার হলো ১২.৬৬ শতাংশ আর এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩.৪ শতাংশ। এ সময়ে করবহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ বেড়েছে আগের বছরের থেকে ২১.৯০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে কর ও করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় হয়েছে বার্ষিক অর্জন লক্ষ্যমাত্রার ৪৩.৬ ও ৫৪.৯ শতাংশ। ২০২৩ অর্থবছরে প্রকৃত কর রাজস্ব আদায় ছিল জিডিপির ৭.৩ শতাংশ, অর্থবছর ’২৪-এর জন্য কর রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে জিডিপির ৯.৯ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে মনে হয় না।
অর্থবছর ’২৩-এ প্রকৃত বাজেট ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) জিডিপির শতাংশ হিসেবে ছিল ৫.২২ শতাংশ। অনুদানসহ তা ছিল জিডিপির ৫.১৫ শতাংশ; অর্থবছর ’২৪-এর জন্য বাজেট ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) জিডিপির ৫.৮৮ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। অনুদানসহ ঘাটতি জিডিপির ৫.৮০ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থবছর ’২৪-এর জন্য জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত প্রকৃত সামগ্রিক ভারসাম্য (অনুদান ব্যতীত) ছিল ঋণাত্মক, যা ছিল জিডিপির -০.৫২ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement