১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
তপ্ত রোদে চরম ভোগান্তি

স্কুল-কলেজ খোলার দিনেই পরিবহন ধর্মঘটের দুর্ভোগে চট্টগ্রামের মানুষ

-


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিনেই চট্টগ্রাম মহানগরী ও পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে গতকাল তপ্ত রোদের মধ্যে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা। নগরীতে হাতেগোনা কিছু টেম্পু এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলেও বেশির ভাগ গণপরিবহন রাস্তায় নামেনি। চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। ফলে কার্যত সারা দেশের সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ গতকাল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ছিল।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদসহ চার দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ কর্মসূচি পালন করেছে। ধর্মঘটের আওতায় ছিল সব ধরনের বাস-মিনিবাস, অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও হিউম্যান হলার। তবে কয়েকটি সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে টেম্পু সার্ভিস চালু রাখে। কিছু কিছু বাসও থেমে থেমে চলতে দেখা যায়। গতকাল রোববার সকালে ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের শ্রমিকরা নগরীতে বাস-মিনিবাস চলাচল ঠেকাতে রাস্তায় নামেন। বহদ্দারহাট, বায়েজিদ বোস্তামীসহ কিছু এলাকায় বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে অটোরিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির অভাবে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কর্মস্থল ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। অনেকে গণপরিবহণ না পেয়ে ট্রাকে করে গন্তব্যে ছুটছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খোলার প্রথম দিনে দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। সকালে নগরীর রাস্তায় দেখা যায়, কিছু দূর পর পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু গাড়ি মিলছে না। একটি রিকশা আসলেই সেটিকে ঘিরে ধরছেন গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষগুলো। আর সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে ভুলেনি সড়কে চলাচলকারী রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাগুলো। অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়া আদায় করছিল তারা।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় নগরের প্রবেশমুখে দেখা যায়, বিভিন্ন উপজেলা এবং বান্দরবান-কক্সবাজারমুখী শত শত যাত্রী সেখানে ভিড় করেছেন। গাড়ি না থাকায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না। অনেককে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে। গরমে হাঁসফাঁস করছে শিশুরা। কক্সবাজার রুটে দু-একটি গাড়ি ছাড়লেও ৪২০ টাকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ অটোরিকশায়, কেউ ট্রাকে উঠে ছুটছেন গন্তব্যের পথে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ আছে। অলঙ্কার, একে খান মোড়, সিটি গেট, কদমতলী থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ছে না। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঐক্য পরিষদে যুক্ত সংগঠন পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, আমাদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। দূরপাল্লার বাস কোথাও চলছে না। চট্টগ্রাম শহরে যেসব বাস চলছে সেগুলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির। তারা ধর্মঘটের সাথে নেই। তাদের ১৫০-২০০টি বাস আছে। সেগুলো হয়তো নগরে চলছে।
ধর্মঘট স্থগিত : এদিকে কাপ্তাই সড়কে জেলা প্রশাসন নিরাপত্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর আশ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাথে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী।


আরো সংবাদ



premium cement