১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জামালপুরে শুকিয়ে গেছে নদীনালা-খালবিল-জলাশয়

যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদিতে নেই পানিপ্রবাহ
-


যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জেলা জামালপুরে তাপদাহ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তাপমাত্রা এখানে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। নদ-নদী, খালবিল ও জলাশয়ে পরিপূর্ণ বন্যাকবলিত জেলা জামালপুরের সবগুলো নদ-নদী, খালবিল, জলাশয়, পুকুর ও কুয়া এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। বলতে গেলে বন্যাকবলিত জামালপুর এখন এক মরুপ্রান্তর।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো দু’টি জাতীয় নদ-নদীসহ এই জেলার বুক চিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে ছোট-বড় প্রায় ১১টি নদ-নদী। যে গুলো এখন মরা খাল। আর বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙন ও ভয়াবহ বন্যা।
এ ছাড়া এ জেলায় আছে অসংখ্য খালবিল, ডোবা ও জলাশয়। বৈশাখের এই সময়ে যে সকল নদী-নালা খাল-বিল, জলাশয় ও পুকুর পানিতে টইটুম্বুর থাকার কথা ছিলো সেগুলো এই সময় পানিশূন্যতায় যেন মরুপ্রান্তরে পরিণত হয়েছে। তীব্র তাপদাহ আর পানিশূন্যতায় জামালপুর জেলা যেন খাঁ খাঁ করছে। প্রকৃতির সাথে মানুষের যে বৈরী আচরণ এটির পাল্টা জবাব দিচ্ছে প্রাকৃতি। এমন মন্তব্য পরিবেশবাদীদের।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলেন, জেলার কোথাও কোনো বনায়ন নেই। সড়ক প্রশস্তকরণের নামে নির্বিচারে নিধন করা হয়েছে গাছপালা ও সামাজিক বনায়ন। ভাঙন রোধের নামে নদীর মোহনায় বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করা হয়েছে নদনদীর পানিপ্রবাহ। হাটবাজার ও ঘরবাড়ি নির্মাণের নামে ভরাট করা হয়েছে পুকুর, খালবিল ও অসংখ্য জলাশয়। আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক এসব জলাশয় ভরাট ও গাছপালা নিধনের কারণে আমাদের সাথেও পাল্টা বৈরী আচরণ করছে প্রকৃতি। পরিবেশবাদীরা আন্তর্জাতিক নদীর পানি নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের অপ্রতিবেশী সুলভ আচরণকেও দায়ী করেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এক সময় ২০ থেকে ২৫ ফুট কুয়া খনন বা নলকূপ স্থাপনেই পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যেত যেখানে, সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ ফুটেও মিলছে না পানি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলগুলোতেও উঠছে না পানি। পানিসঙ্কটে লাখ টাকা ব্যয়ে সাবমার্স পানির কল বসাতে বাধ্য হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। আর সাধ্যহীন দরিদ্র পরিবারগুলো তীব্র তাপদাহে চরম পানি সঙ্কটে ভোগছেন।

জামালপুর জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলার সর্বত্র খালবিল, নদীনালা, পুকুর-জলাশয়ের ওপর মানুষের দখল দারিত্ব চলছে আর নির্বিচারে চলছে বৃক্ষ নিধন। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগেই আমরা জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, জামালপুর-রৌমারী-রাজিবপুর সড়ক এবং ইসলামপুর-গুঠাইল আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও মাঠে ঘাটে দেশীয় জাতের বিশাল বিশাল অসংখ্য গাছ দেখেছি। সে গুলো এখন কোথায়? সড়কগুলো এখন যেন বিরাণ ভূমি। তীব্র রোদে খাঁ খাঁ করছে সড়ক মহাসড়ক ও মাঠঘাট। গরমে গলে যাচ্ছে পিচ ঢালা রাস্তা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ তীব্র তাপদাহে একদিকে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত তখন বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন মানুষকে আরো ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নদনদী ও জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়ায়, পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ দিকে বিদ্যুতে ভেলকিবাজির কারণে কৃষি নির্ভর জেলা জামালপুরের চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসলের ক্ষেতে প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে পারছে না। ফলে ভুট্টা, বাদাম, মরিচ,পাট, কাউন, চিনা ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাট চাষ বিঘিœত হচ্ছে। সময় মতো প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে না পারলে চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কিত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত জেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছেন কৃষিনির্ভর জেলা জামালপুরে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে।
যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড হেক্টরপ্রতি ৪.৯৮ মেট্রিক টন, উফশী-৩.৯৯ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাত-১.৯৬ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, এখন ধান গাছের গর্ভে শীর্ষ। এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সঠিক সেচ দিতে না পারলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কিত আমরা।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও, বাড়েনি সরবরাহ। এতে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। তবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে গ্রামগঞ্জ চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে আশার বাণী শোনাতে এসে ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান। তিনি বলে গেছেন, তাপপ্রবাহ কমে গেলেই লোডশেডিং আর থাকবে না।
গত বুধবার জেলার ইসলামপুরে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্থান পরিদর্শনে এসে এই আশার কথা শোনান বিদ্যুৎ সচিব।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আরো বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বোরো চাষের অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় সমানভাবে লোডশেডিং হচ্ছে বলেও জানান তিনি। দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন হলে আগামীতে লোডশেডিং কমবে বলেও আশার বাণী শোনান সরকারের এই ঊর্ধ্বতন আমলা।
এলাকাবাসী বলছেন, দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঘুমাতেও পারছেন না। ধানক্ষেতে সেচ দিতে পারেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ পাম্পের পাশাপাশি ডিজেল চালিত পাম্প লাগিয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
কৃষকরা বলছেন, এই সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন এই আমলার এমন বাণী দেশবাসীর সাথে মশকরা ছাড়া আর কিছুই না।


আরো সংবাদ



premium cement
‘জাতিকে মেধাশূন্য করতেই ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড’ দ্বিতীয় দফা অভিশংসনের মুখে ইউন সুক মহিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত আহত বেল্লাল স্বপ্ন দেখেন নতুন বাংলাদেশের আ’লীগ পাক বাহিনীর জুলুমের পুনরাবৃত্তি করেছে : শফিকুল আলম নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিএনপির শ্রদ্ধা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিয়ে দূষণে শীর্ষে ঢাকা ‘মধ্যপ্রাচ্যকে নিজেদের অনুকূলে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল’ শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা, তাপমাত্রা নামলো ৮ ডিগ্রিতে তালিবান মন্ত্রীর হত্যাকাণ্ডে আইএস-এর সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ

সকল