সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতির অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের
- সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
- ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩০
সাভার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার সামনে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, সাভার আঞ্চলিক কমিটি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিউন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, জি-স্কপ ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গতকাল বুধবার সকাল থেকে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, হাজারো প্রাণ ও স্বপ্ন হত্যার বিচার চাই এবং মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো আহবানে আলোচনা সভা, মানববন্ধন, প্রতিবাদী র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। একই সাথে রানা প্লাজায় শ্রদ্ধা অর্পণ শেষে বাংলাদেশ গার্মেন্টস সংহতির উদ্যোগে বেলা ১১টায় উদ্ধারকর্মী হিমালয় হিমুর আত্মাহুতির ৬ বছরে বিরুলিয়ার গোলাপগ্রামে হিমুর মৃত্যূর স্থানে শ্রদ্ধা অর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর এবং হাজারো শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বিআইজিডির গবেষক মাহীন সুলতান।
বক্তারা এ সময় বলেন, সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা রানা প্লাজা ভবন ধসে হাজারো প্রাণ ও স্বপ্ন নাই হবার ঘটনা। ১১ বছরেও যথেষ্ট সাক্ষী না পাবার খোঁড়া যুক্তিকে সামনে এনে বিচার প্রক্রিয়া ধীর করে রাখা হয়েছে। অথচ দোষীদের শনাক্ত করার মতো দিবালোকের মতো প্রমাণ ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই নিহিত আছে। বক্তারা আরো বলেন, শুধু ভবন মালিক সোহেল রানা নয়, বিভিন্ন কারখানার মালিক, ত্রুটিপূর্ণ ভবন অনুমোদনের জন্য সরকারি কর্মকর্তারাসহ আরো অনেকে এই ঘটনার জন্য দায়ী। অথচ সোহেল রানা ছাড়া বাকি সবাই জামিনে মুক্ত এবং আইনের ফাঁক ফোকর গলে জেলের বাইরে। আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলার গতি ধীর করার জন্য সর্বোচ্চ তৎপর তারা। বক্তারা বলেন, আইনের শাসন সবার জন্য নিশ্চিত হওয়ার যে ব্যবস্থা থাকা দরকার তা প্রশ্নের সম্মুখীন আজ। সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং মালিকদের প্রভাবের কারণে এই দীর্ঘ সূত্রতা চলছে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি থেকে ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির আদেশ আছে আপিল বিভাগের। এই সময়ের মধ্যে যাতে মামলা শেষ হয় এবং রানা প্লাজার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পায় তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু এই দোষীদের নানা কায়দায় রক্ষা করাই যেন এখন দীর্ঘসূত্রতার প্রধান কারণ বলে রানা প্লাজায় নিহত স্বজনসহ জনগণের উদ্বেগ।
বক্তারা বলেন, রানা প্লাজার ঘটনাকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের লড়াইয়ে প্রেরণা হিসাবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। আর সে কারণে রানা প্লাজার সামনের স্থানটিতে স্থায়ী বেদি নির্মাণ এবং স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বক্তারা বলেন , গত ১১ বছর ধরে রানা প্লাজার এই ঐতিহাসিক জায়গাটি নানাভাবে আবর্জনার স্তূপে, কখনো দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তারা বলেন, রানা প্লাজা স্থানটি আবর্জনার স্তূপে পরিণত না করে এটি যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে। ধসে পড়া স্থানে বহুতল ভবণ নির্মাণ করে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়।
বক্তারা আরো বলেন, এক দিকে একজীবনের সমপরিমাণ সম্মানজনক-মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা না করে ব্যান্ড, এনজিও এমনকি সরকারের দফায় দফায় কিস্তিতে শ্রমিকদের অর্থ সহযোগিতার ও নানা প্রশিক্ষণের নামে শ্রমিকরা যাতে বিচারের দাবিতে সংগঠিত না হয়ে ভিক্ষুকের মতো দ্বারে দ্বারে কেবল সহায়তা খোঁজে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা বলেন, ক্ষতিপূরণ কোনো ভিক্ষা নয় এটি শ্রমিক ও নাগরিকের আইনি অধিকার। এই অধিকার রক্ষায় এক হওয়ার আহ্বান জানান তারা। নিহত ও আহত পরিবারকে ১১ বছর আগে যে আইনি ক্ষতিপূরণ বা অনুদান দেয়া হয়েছে তা কখনোই সম্মানজনক বা মর্যাদাপূর্ণ নয়। শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণের আইন যা বদল হয়েছে তা অতি নগণ্য। ১ লাখ এবং দেড় লাখ থেকে ২ লাখ ও আড়াই লাখ পর্যন্ত বাড়ানো কোন শ্রমিককে মানুষ হিসাবে গণ্য না করারই উদাহরণ। তারা বলেন, যে রাষ্ট্রে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ নেই জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ নেই, সেখানে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আরো বিপর্যস্ত। নেতৃবৃন্দ বলেন, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ স¤পাদক বাবুল হোসেন, সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, আহত জেসমিন, নিহত শাওনের বাবা আজিজ মিয়া, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, নিহত শাহীদার মা তাহেরা এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপিতি মো: রফিকুল ইসলাম সুজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা