১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাজিরায় আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

২ শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, বাড়িঘর ভাঙচুর
-

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাজিরার বিলাশপুর ইউনিয়নে পরাজিত ও বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষকারীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২ শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ককটেল বোমার আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহতসহ ১৫-২০টি বাড়িঘর ভাচুর করা হয়েছে বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাজিরা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের সারেং কান্দি ও মূলাই বেপারি কান্দি এলাকায় এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারি ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাজিরা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য জলিল মাদবরের সাথে দীর্ঘদিন থেকেই বিবাদ চলে আসছিল। এ বিষয় নিয়ে গত দুই মাসের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ মার্চ মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামে এই দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষ হয়। ওই সময় সংঘর্ষে ককটেলের আঘাতে সজীব মুন্সী নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এরপর গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুই পক্ষের সমর্থকরা আবার সংঘর্ষে জড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, দুই পক্ষের সমর্থকরা ফসলি জমির মাঠে নেমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে লক্ষ্য করে ককটেল বোমা ছুড়ছে। এ সময় ককটেল বোমার আঘাতে দুই পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সৈকত সরদার নামে এক যুবককে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। সংঘর্ষের ঘটনায় বিলাশপুরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষের সাথে জড়িত সন্দেহে ২ জনকে আটক করলেও তাদের নাম জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জলিল মাদবর বলেন, রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গতকাল সকালে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার সমর্থকদের অন্তত ১০-১৫টি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। শাহাবুদ্দিন নামে আমার এক সমর্থকের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে কুদ্দুস বেপারির সমর্থকরা। এ ছাড়াও আমার কয়েকজন সমর্থক মারাত্মক আহত হয়। আমি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করব।
বিলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারি বলেন, গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই জলিল মাদবরের লোকজন আমার লোকজনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। গত মঙ্গলবারের এক পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার লোকজন গতকাল সকাল থেকেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে আমার কয়েকজন সমর্থককে বেদম মারধর করে। এর মধ্যে সৈকত সরদার নামে আমার একজন সমর্থক গুরুতর আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি থানায় মামলা করব।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর থেকেই বর্তমান চেয়ারম্যান ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কোন্দল চলে আসছে। এরই জেরে গতকাল সকালে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এর আগেই দুই পক্ষ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দায়ের হলে আমরা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।

 


আরো সংবাদ



premium cement