ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলেও চরম ভোগান্তি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৮
- খাবার পানির সঙ্কট, মাত্রা বেড়েছে আর্সেনিকের, কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব
- বনাঞ্চল ধ্বংস ও জলাশয় ভরাটকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা
দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর মারাত্মকভাবে নেমে গেছে। এতে বড় সঙ্কটে পড়েছেন কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের মানুষ। গভীর ও অগভীর নলকূপগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না। খাবার পানির জন্য বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। ফসলের খেতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতে পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ভরাট করার কারণে পানির সহজলভ্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক স্থানে সাধারণ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীরা তা পান করছেন।
চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপদাহের পাশাপাশি পানির সঙ্কটে ভুগছেন গরমে নাভিশ্বাস হওয়া মানুষ। মানিকগঞ্জের ঘিওরে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে ২৮ ফুট। এতে জনজীবন ও কৃষিতে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বেশর ভাগ নলকূপ অকেজো, বেড়েছে আর্সেনিকও। ময়মনসিংহের ভালুকায় খাবার পানির চরম ভোগান্তিতে রয়েছে মানুষ।
এ দিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছর স্থানীয় পর্যায়ে নির্বিচারে সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসসহ ছোট-বড় বৃক্ষ নিধনের ফলে বাধাহীন সূর্যের তাপ বাড়ছে। এ ছাড়া ভরাট হওয়া পুকুর, নদী, খাল-বিল পানিশূন্য হয়ে যেন খাঁ খাঁ করছে। অন্য দিকে একশ্রেণীর ভূমিদস্যু শিল্পপতিদের মদদপুষ্ট হয়ে স্বল্পমূল্যে জলাভূমি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাতে দেদারসে অপরিকল্পিত কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এসব কারণেও গ্রামপর্যায়ে এখন তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা যেন মরুভূমি
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে মনিরুজ্জামান সুমন জানান, যেন মরুভূমির দেশে বাস করছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ। টানা সাত দিনের তীব্র তাপদাহে জেলার বেশির ভাগ গ্রামগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ১৫-২০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। ফলে নলকূপ ও পাম্পে উঠছে না পানি। কিছু কিছু জায়গায় পানি উঠলেও সেটা খুব সীমিত। তবে পানি পেতে অনেকই পাম্প মাটির ১২-১৪ ফুট গভীরে স্থাপন করছে। এ দিকে চরম বিপাকে পড়েছেন টিউবওয়েল ব্যবহারকারীরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি পাঁচ হাজারের বেশি ও ব্যক্তিমালিকানা প্রায় ৪০ হাজার সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজারের উপরে নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না, বাকিগুলোতে যে পরিমাণে পানি উঠছে প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের চেয়ারম্যান হজরত আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গায় তীব্র তাপদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে টিউবওয়েলের পানি খুবই কম উঠছে। মাঠের সেচ পাম্পগুলোর একই অবস্থা। দামুড়হুদার কুড়োলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মো: কামাল বলেন, তাপদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবওয়েলে পানি ওঠা একেবারেই কমে গেছে।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির স্তর বছর বছর নিচের দিকে নামছে। সাত-আট বছর আগেও এ অঞ্চলে ৫০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভের সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১২০-১৩০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘিওরে পানির স্তর নেমেছে ২৮ ফুট
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) থেকে আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘিওরে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে ২৮ ফুটের বেশি। গত কয়েক দিনের খরতাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। খাল-বিল, নালা-ডোবা, পুকুর শুকিয়ে চৌচির। দীর্ঘ এক মাস বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভয়াবহ সেচ সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, লোডশেডিং ও পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় সেচ পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। মাঠের পর মাঠ পানি শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। ফলন্ত ধান খেতে পর্যাপ্ত সেচ না দেয়া গেলে খরায় পুড়ে ধানে চিটা হওয়ায় আশঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের। ঝরে পড়ছে মাঝারি আকারের আম ও লিচুর গুটি। খরা, বৃষ্টিহীনতায় সেচ যন্ত্রের পাশাপাশি টিউবওয়েলেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সদর এবং বড়টিয়া ইউনিয়নে সুপেয় পানির সঙ্কট বেশি বলে জানা গেছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালে পানিতে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সিংজুরী, বানিয়াজুরী, বড়টিয়া, নালী, ঘিওর, বালিয়াখোড়া, পয়লা ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৫০০ টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক টিউবওয়েলে আর্সেনিক পায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। উপজেলায় সর্বোচ্চ প্রতি লিটারে ০.১৭২ মিলিগ্রাম আর্সেনিক এবং ১০.১ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া গেছে; যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ ছাড়াও ভূগর্ভে অতিরিক্ত পাথরের উপস্থিতি থাকায় পানিতে অতিরিক্ত আয়রন দেখা দিচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উপজেলায় ভূগর্ভের পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপে পর্যাপ্ত পানি নেই। কিছু এলাকায় মানুষ ৫৫০-৬০০ ফুটেরও বেশি গভীর নলকূপ বসিয়ে পরিবারের পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এ অবস্থায় উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এবং কৃষিক্ষেত্রে তীব্র পানির সঙ্কটের মুখে পড়েছে। চরকোশুণ্ডা গ্রামের শহিদুর রহমান টিপু বলেন, মাসখানেক ধরে বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ২২০ ফুটের টিউবওয়েল স্থাপন করেছি কিন্তু পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিক ধরা পড়ে। মানিকগঞ্জ কৃষক সমিতির সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম বলেন, গভীর বা অধিক শক্তিশালী সেচ পাম্প দিয়ে কিছুটা পানি পাওয়া গেলেও ছোট পাম্পগুলোতে একেবারেই পানি উঠছে না। স্বাভাবিক সময়ে ১০-১২ বিঘা জমিতে সেচ দেয়া গেলেও বর্তমানে মাত্র তিন বিঘা জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় একই অবস্থা হয়েছে। গাংডুবী গ্রামের কৃষক মনোরঞ্জন মণ্ডল বলেন, খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে দিনরাতের চার-পাঁচবার হচ্ছে লোডশেডিং। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাজেদুল ইসলাম বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভের পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে। পানির স্তর দিনদিন আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট হাজার ৭৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। তাপদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলন বিপর্যয় ঘটতে পারে।
দৌলতপুরে বেশির ভাগ নলকূপ অকেজো
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) থেকে আহাদ আলী নয়ন জানান, দৌলতপুর উপজেলার ৩০-৩৫ ভাগ অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কিছু দিন আগেও এসব নলকূপে পানি উত্তোলন করা হলেও এখন আর পানি ওঠানো যাচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে তীব্র তাপদাহের কারণে পানির স্তর কিছুটা নেমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেড়েছে আর্সেনিকের মাত্রাও। বিশেষ করে মথুরাপুর, প্রাগপুর, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামেরই আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে যাদের গভীর নলকূপ রয়েছে তাদের নলকূপে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এখানকার শতভাগ মানুষই ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল। উপজেলায় প্রায় ৫৫ হাজার টিউবওয়েল বা অগভীর এবং প্রায় সাত হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। ফসলে সেচের জন্যও ভূগর্ভের পানিই কৃষকদের একমাত্র ভরসা।
গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের শুষ্ক মৌসুমে নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা পানি কম পাওয়া গেলেও তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বছর ভূগর্ভের পানির বেশ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্রামের প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ মানুষের নলকূপ দিয়ে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক চাপাচাপির পর এসব নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ভাগও পানি উত্তোলন করতে করা যাচ্ছে না। এই সামান্য পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটছে না। সাধারণ মোটর (সাবমার্সেবল ব্যতীত) দিয়ে যারা পানি উত্তোলন করে থাকেন তাদের অবস্থা আরো করুণ। টিউবয়েল দিয়ে সামান্য কিছু পানি উঠানো গেলেও প্রায় ৮০ ভাগ সাধারণ মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করতে পারছেন না। ফলে পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। এ দিকে মথুরাপুর, প্রাগপুর, আদাবাড়িয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে নলকূপে পানি সঙ্কটের পাশপাশি আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পানি সঙ্কটের কারণে গ্রামের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছেন।
এ দিকে তীব্র তাপদাহে ফসলের স্বাভাবিক উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধান, কলা, মরিচসহ জমিতে যেসব ফসল রয়েছে, তা তীব্র রোগে পুড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। স্যালো পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভের পানি স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম উত্তোলন করা যাচ্ছে। ফলে সারাদিন স্যালো চালিয়েও এক-দুই বিঘা জমির ফসলে পানি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে এক দিকে উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে অন্য দিকে খরচও স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেছে। উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের বৈরাগিরচর গ্রামের বাসিন্দা কেরামত আলী বলেন, টিউবয়েলের সাথে মোটর লাগিয়ে তিনি পানি উত্তোলন করেন। পাইপে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। মোটর চালুর পর দুই এক মিনিট পানি ওঠার পর আর পানি ওঠে না। পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘনঘন সেচ ও কীটনাশক দেয়ার ফলে অন্যান্য বছরের থেকে এবার চাষের খরচ বাড়বে। মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ টিউবওয়েল দিয়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া তার ইউনিয়নে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী খাদিমুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে চলে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্ষা শুরু হলে নলকূপগুলো ফের স্বাভাবিক হয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম লিমন বলেন, কৃষকদের জমিতে সেচ দেয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ভালুকায় খাবার পানির সঙ্কট
ভালুকা (ময়মনসিংহ) থেকে আসাদুজ্জামান জানান, ভালুকা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুর জলাশয় শুকিয়ে গেছে। বেশির ভাগ সাবমার্সিবল নলকূপ বন্ধ হয়ে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানির সমস্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভালুকায় কতগুলো সরকারি টিউবওয়েল ও তারা পাম্প অকেজো আছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে তার কোনো তথ্য নেই।
প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কারণে উপজেলার প্রায় গ্রামেই মোটরচালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্পের প্রচলন বেড়ে গিয়েছে। কমে গেছে চাপকলের ব্যবহার। গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড তাপদাহ বয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে বেশির ভাগ টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যা সারাতে লোকজন ভিড় করছেন টিউবওয়েলের দোকানে আর দ্বারস্থ হচ্ছেন মিস্ত্রিদের। টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভালুকা পৌর এলাকার মেজর ভিটা, ঢালী ভবন, তোতাখাঁর ভিটায় ও টিঅ্যান্ডটি রোডে বর্তমানে পানির স্তর ৭০-৭৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে ওপরের লেয়ারে স্থাপিত বেশির ভাগ সাবমার্সিবল পানির পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সারাতে তারা দিন রাত বাসায় বাসায় কাজ করছেন। এসব কলের কোনটায় অতিরিক্ত ১০ ফুট কোনটার ২০ ফুট পাইপ সংযোজন করে পাম্প মোটর নিচে নামিয়ে পানির লেয়ারে স্থাপন করে পানি ওঠাতে হচ্ছে। যাদের ৮০ ফুটের নিচে হাউজিং রয়েছে তাদের পাম্পে পানি উঠছে না। আর যেসব সাবমার্সিবল ৮০ থেকে ১২০ ফুটের হাউজিং করে মোটর স্থাপন করা আছে, শুধু ওই সব পাম্পে পানি উঠছে। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের চাপরবাড়ী গ্রামের হাজী নাজিম উদ্দীন খান (৯২) জানান তাদের প্রায় দেড় শ বছরের পুরনো পুকুরটি খরার কারণে এখন প্রতি বছর শুকিয়ে যায়। এতে প্রায় ১০-১৫টি পরিবারের লোকজন গোসল করা ও গবাদি পশু সংরক্ষণের ব্যাপক সমস্যা পোহাতে হয়। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শতকরা ৬০-৭০টি পানির পাম্পের একই অবস্থা। যারা ১০০ থেকে ১২০ ফুট নিচে হাউজিং করে মোটর স্থাপন করেছেন তাদের কলে মোটামুটি পানি উঠছে। অনেকেই বলছেন, এ অঞ্চলে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে এবং তারা ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করে পানি উত্তোলনের কারণে বিগত বছরগুলোতে খরা মৌসুমে পানির স্তর সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত নামলেও তা স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এ বছর ৭০ থেকে ৭৫ ফুটের নিচে পানির স্তর নেমে গেছে এবং এতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী পলাশ সরকার জানান, ভালুকায় অসংখ্য ডাইং কারখানায় প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করার কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের বিশাল সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসসহ ছোট বড় বৃক্ষ নিধনের ফলে বাধাহীন সূর্যের তাপদাহ আর ভরাট হওয়া পুকুর নদী খাল বিল পানিশূন্য হয়ে যেন খাঁ খাঁ করছে। অন্য দিকে একশ্রেণীর ভূমিদস্যু সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে মাটি ফেলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাতে দেদারসে অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ ধ্বংস করছেন; যা প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কোনো সংশ্লিষ্ট মহল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা