১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিঘিœত বোরো চাষ

লোডশেডিংয়ে জামালপুরে বোরো ক্ষেতে পর্যাপ্ত সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না : নয়া দিগন্ত -


তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জামালপুরের ফসল । গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। এসময় পল্লী বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরের জনজীবন। বিঘিœত হচ্ছে ইরি-বোরো ধানক্ষেতের পানি সেচ। এতে পুড়ে যাচ্ছে ভুট্টা, গম, বাদামসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসল।
জেলা শহরে বিদ্যুতের লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকছে না ২৪ ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় এমন পরিস্থিতি ।
এদিকে বৈশাখ মাস শেষ হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জেলা জামালপুরে। প্রখর রোদ আর তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পরিবেশ। এরই মধ্যে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং জনজীবনে বাড়িয়েছে দুর্ভোগের মাত্রা।
গত দুই সপ্তাহ ধরে জামালপুরে ২৪ ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমে অস্বস্তির পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। বিঘিœত হচ্ছে ইরি-বোরো ধান চাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কল কারখানার উৎপাদন। আর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। জেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, দিনে কতবার আসে-যায় তার কোনো হিসাব নেই। যদি এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে তো দুই থেকে তিন ঘণ্টা নেই। এর মধ্যে আসা যাওয়ার ভেলকিবাজি তো আছেই। বিদ্যুতের অভাবে ইরি-বোরে ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত জেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছে কৃষিনির্ভর জেলা জামালপুরে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪ হাজার ৮২৫ হেক্টর, সরিষাবাড়ীতে ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর, মেলান্দহে ২৯ হাজার ২৮৫ হেক্টর, ইসলামপুরে ১৭ হাজার ১১০ হেক্টর, দেওয়ানগঞ্জ ৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর, মাদারগঞ্জে ১৬ হাজার ৩২৫ হেক্টর এবং বকশিগঞ্জে ১৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে । যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড হেক্টর প্রতি ৪.৯৮ মেট্রিক টন, উফশী-৩.৯৯ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাত-১.৯৬ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, এখন ধান গাছের শীষ আসছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সময় সঠিক সেচ দিতে না পারলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কিত তারা।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও, বাড়েনি সরবরাহ। এতে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে ।

এলাকাবাসী বলছেন, দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঘুমাতেও পারছেন না তারা। ধানক্ষেতে সেচ দিতে পারেন না কৃষক । অনেকে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ পাম্পের পাশাপাশি ডিজেলচালিত পাম্প ব্যবহার করছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচও ।
জামালপুর শহরে পিডিবির বিদ্যুতের লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় হয় উঠেছে । জেলার চরাঞ্চলগুলোতে দিন-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজালাল নির্ঝর জানান, ১৭০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে কখনো ৮০, কখনো ৯০ আবার কখনো ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। ফলে সবসময় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা গ্রিড থেকে ১৩২ কেভি লেভেলে বিদ্যুৎ নিয়ে থাকি । তারপর ৩৩ কেভি লেভেলে আমাদের উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সেটি গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় । যে কারণে গ্রিডে উৎপাদন কম থাকলে আমাদের করার কিছু থাকে না। বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হয়।
জামালপুরের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ৭ লাখ ১৫ হাজার। এসব এলাকায় ১৭০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট।


আরো সংবাদ



premium cement