১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ক্ষতি পোষাতে স্কুল কলেজে অনলাইনে ক্লাসের অনুমতি

নতুন কারিকুলামের শিখন ঘাটতির শঙ্কা
-


ঈদের ছুটি শেষে দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বেড়েছে স্কুল কলেজের ছুটি। এই ছুটি আরো বাড়ারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের শিখন ঘাটতির ক্ষতি পোষাতে এখন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাইলে অনলাইনেও ক্লাস নিতে পারবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অঘোষিতভাবে অনুমতি দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে টানা ২৬ দিন ছুটি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর গত রোববার থেকে যুক্ত হয়েছে ‘গরমের কারণে’ পাঁচ দিনের অতিরিক্ত ছুটি। এতে শিক্ষার্থীদের ‘শিখন ঘাটতি’ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানী ঢাকার অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। এতে বাধা দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে তারা বলছে, যারা অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারবে না তাদের ‘অনুপস্থিত’ দেখানো যাবে না।

এ দিকে টানা ২৬ দিন বন্ধের পর নতুন করে পাঁচ দিন ছুটি যোগ হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরা। ঘাটতি পোষাতে তাই অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই রকম ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরুও হয়েছে।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস অনলাইন পদ্ধতিতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অপর দিকে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব ক্লাস অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরিচালিত হবে।
এ দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের প্রধান জানান, অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছেন তারা। মহাখালী ডিওএইচএস বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনলাইনে ক্লাস নেয়া হবে বলে এসএমএস দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটির সব ক্লাস অনলাইনে নেয়া হচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস করছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও। একইভাবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, আমরা অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত না থাকে, তাকে অনুপস্থিত দেখানো হবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ জাফর আলী বলেন, সরকার বিশেষ দুর্যোগকাল হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঁচদিন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ সময় কেউ অনলাইনে ক্লাস নিলে নিষেধ নেই। তিনি বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় সব শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামে পাঠদান চলছে। তাই শিখন ঘাটতি পোষাতে যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের সাধুবাদ জানাই।
অবশ্য গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে দেশের সব অঞ্চলে। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশের দাবির মুখে স্কুল-কলেজ পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর রাতের দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব কলেজের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কারিগরি ও মাদরাসা অধিদফতরও তাদের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

তীব্র তাপদাহে বশেমুরবিপ্রবিতে অনলাইনক্লাস বন্ধ থাকবে সকল পরীক্ষা!
বশেমুরবিপ্রবি সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের ওপর দিয়ে প্রবহমান তীব্র তাপদাহের (হিট ওয়েভ) প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ভার্চুয়ালি ক্লাসের নির্দেশ দিয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ। এই সময়ে বন্ধ থাকবে পরীক্ষাসমূহ।
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এ কিউ এম মাহবুবের সভাপতিত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ৮ম জরুরি সভায় (ভার্চুয়ালি) এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আগামী ৪ মে পর্যন্ত চলমান থাকবে এই সিদ্ধান্ত।
রেজিস্ট্রার মো: দলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সারা দেশের ওপর দিয়ে প্রবহমান তীব্র তাপদাহের কারণে ২২ এপ্রিল হতে আগামী ৪ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে এবং সর্ব প্রকার পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অফিস কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। তবে দাফতরিক প্রয়োজনে দফতর প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দফতরে অবস্থান করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং জরুরি পরিষেবাসমূহ যথানিয়মে চলবে।

তীব্র তাপদাহের প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সাথে সবাইকে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধন্তে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর কর্মকার বলেন, তীব্র গরমে ঘরের বাইরে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এই রোদে-গরমে আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই।
অপর দিকে ফার্মেসি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক ফয়সাল বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটার জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু আসলেই কি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করা হয়েছে? অনেক বিভাগের সেশন জট আছে সেসব কথা কি কেউ ভেবে দেখেছে? ক্লাস অনলাইনে নিয়ে, অন্তত সশরীরে পরীক্ষা নিতে পারত। এই সিদ্ধান্তের পরে অনেক বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনেক বিভাগের অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এর ক্লাস শুরু করেছে। সেখানে অনেক বিভাগের অনার্সই শেষ হয়নি। পরীক্ষা স্থগিত এর সিদ্ধান্তে আরো জট বাড়বে, কারণ জুন মাস থেকে আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি!
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ এপ্রিল ও ০৩ মে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জিএসটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসগুলো যথানিয়মে চলবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement