১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
জাল সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেফতার

-

জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গত শনিবার রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। এ ব্যাপারে বোর্ডেও চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ডিবি বলেন, এই ঘটনার সাথে সাথে যত বড় রাঘববোয়াল জড়িত থাক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালাবাগ বিভাগ গত ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চারিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যাক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করা করে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সার্টিফিকেট মার্কশিট তৈরি করার মতো বিশেষ কাগজপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাংক কপি উদ্ধার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। তাদের দেয়া তথ্য ও তাদের সবার মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যায়ক্রমে এই চক্রের সাথে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে (৪৮), ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো: মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সর্বশেষ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা: শেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেফতার করে পুলিশ।
হারুন অর রশীদ বলেন, এ কে এম শাসমুজ্জামান ও তার সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের অধিক জাল সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হ্যান্ডওভার করেছে। একই সাথে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। কোনোক্রমে ই-সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা নয়। সিস্টেম এনালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটরা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এই কাজগুলো করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর সৃজন, রেজাল্ট পরিবর্তন পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছে কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সাথে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement