শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৬
দেশের বিভিন্নস্থানে শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাঙ্গামাটি ও ধামরাইয়ে বজ্রপাতে কিশোরীসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খুঁটি ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বজ্রপাতে কৃষকের তিনটি গরুর মারা গেছে। বোরো ধান, তরমুজ, ডাল, টমেটোসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল (১৮ এপ্রিল) ভোররাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বজ্রপাত, ঝড়ো বাতাস ও শিলাবৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া বজ্রপাতে বিভিন্ন বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নষ্ট হয়েছে।
জানা গেছে গতকাল ভোররাতে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে অনেক বাড়ি ঘরের টিনের চাল উপড়ে গেছে। উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি স্থানে খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে গরমের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। রহমতাবাদ এলাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বজ্রপাতে আমার এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান, রেজাউল করিম ও আবুল হাসেমের তিনটি গরু বজ্রপাতে মারা যায়। মারা যাওয়া গরুর মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা হবে। পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম জানান, গত বেশ কয়েক দিন গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। তারপরও বৃহস্পতিবার ভোরে বাতাসে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছি। অনেকবার বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করেছি। এখনো লোকজন আসেনি। ভোর সাড়ে চারটা থেকে দেড়ঘণ্টা ধরে পড়া শিলাবৃষ্টিতে ঝরে পড়েছে অনেক গাছের আম। ক্ষতি হয়েছে মিষ্টিকুমড়া, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের। ঘরের চালের টিন ফুটো হয়ে গেছে অনেক বাড়িতে। কৃষক ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে থেমে থেমে বড় আকৃতির শিলা ঝরেছে। এসব শিলার কোনো কোনোটির ওজন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। শিলার আঘাতে বসতঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে অনেক পরিবারের।
মঘাদিয়া ইউনিয়নের হাসিমনগর এলাকার কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, ক্ষেতে তোলার উপযোগী ২০ মণের মতো পাকা টমেটো ছিল। আজ ভোরের শিলাবৃষ্টিতে বেশির ভাগ টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি লিটন চন্দ্র নাথ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে অনেক বাড়িতে ঘরের টিনের চালায় বড় বড় ফুটো তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে ঘরের টিন বদলানোর কাজ করতে অনেক বাড়ি থেকে ডাক আসছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের শীলাবৃষ্টিতে আবাদকৃত বোরো ধান, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ডালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৯৫০ হেক্টর জমির বোরো আক্রান্ত হয়েছে। তারমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হেক্টর জমির ধান। ৪০ হেক্টর জমির গ্রীস্মকালীন সবজি আক্রান্ত হয়েছে, তারমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৮ হেক্টর জমির সবজি। ৭৫০ হেক্টর জমির ডালক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে ৩৮ হেক্টর জমির ডাল। মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, বৃষ্টি হলে তেমন ক্ষতি হতো না। শীলাবৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। বৃষ্টি যদি আর না হয় তাহলে আক্রান্ত জমির ধান ও ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। যদি আবারো বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমদের মোবাইলে একাধিবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রাঙ্গামাটিতে ও ধামরাইয়ে বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি ও লংগদু সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহ থেকে রাঙ্গামাটির লংগদুতে মামাবাড়ি বেড়াতে এসে বজ্রপাতে আয়েশা আক্তার নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কালবৈশাখী বয়ে গেলে লংগদু ভাইবোনছড়ায় একটি কাঁচা ঘরের ওপর বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘরের ভেতর পরিবারের অন্যদের সাথে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় আয়েশা আক্তার গুরুতর আহত হন। আয়েশাকে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিশোরীটি ময়মনসিংহ থেকে তার বাবার সাথে লংগদু ভাইবোনছড়ায় মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। লংগদু থানা ওসি তদন্ত জালাল উদ্দিন জানান, তিন মাস আগে নানীর সাথে কিশোরীটি তার মামা জাকির হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে আসে।
ঢাকার ধামরাইয়ে মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাসেম (৪৫) বজ্রপাতে মারা গেছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে ধামরাইয়ের কিশোরীনগর বিলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কাসেম ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের বালিথা পূর্বপাড়া গ্রামের সমেজ উদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাসেম তার ছেলেসহ চারজনে গত মঙ্গলবার বিকেলে কিশোরীনগর বিলের পুকুরে মাছ ধরতে যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কাসেম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে পাশে থাকা অপর তিনজনসহ অন্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা