১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাকা থেকে বের হতেই ৩ ঘণ্টা

নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছে মানুষ। টঙ্গী স্টেশনে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠার দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

- বাস-ট্রেন-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়
- দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায়

যাত্রাবাড়ী থেকে শরীয়তপুরের বাসে চড়বেন শফিকুল ইসলাম। সাথে স্ত্রী-সন্তানরা। রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে আফতাব নগরের সামনে যানজটে পড়েন। এরপর রামপুরা টিভি সেন্টার থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পুরোটাই যানজট। মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে দিয়ে তাদের সিএনজি অটোরিকশা বাঁ দিকে মোড় নিয়ে এসে কমলাপুর বিশ্বরোডে ঢুকে কিছুদূর এগোতে পেরেছে যানজট ছাড়া। কমলাপুর থেকে আবারো সেই যানজট। এবার আর গাড়ি নড়ছে না। এভাবে যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতেই প্রায় দুই ঘণ্টা কেটে যায়। যাত্রাবাড়ী মোড় হেঁটেই পার হন। নাহলে হয়তো ওখানে আরো এক ঘণ্টা অটোরিকশার মধ্যেই থাকতে হতো।
যাত্রাবাড়ী কাউন্টার থেকে শরীয়তপুরগামী গাড়িতে যখন চড়েন তখন সকাল ১০টা। সেখান থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত আরো এক ঘণ্টা। ঢাকা থেকে বের হতেই সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। শফিকুল জানান, এরপর আর কষ্ট হয়নি; কিন্তু এই তিন ঘণ্টার কষ্টে মনে হচ্ছিল পথ বুঝি আর শেষ হবে না। একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন নয়াবাজার হয়ে যারা মাওয়া রোডে গিয়েছেন তারাও। বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু পার হয়ে ফ্লাইওভার পর্যন্ত যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে গেছে অনেকের। ফয়সাল নামের এক যাত্রী বলেন, ওই রাস্তাটুকু পার হতেই যত কষ্ট। কেরানীগঞ্জ দিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠার পর আর কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।
এ দিকে যাত্রাবাড়ী হয়ে যারা চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কিশোরগঞ্জ রুটে গিয়েছেন তারাও পড়েছেন চরম ভোগান্তির মুখে। যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেছে তাদের। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সেখানে কয়েকজন বাসযাত্রীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, যাত্রাবাড়ী মোড় এখন আজাবের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মোড়টি পার হতে হবে এমন চিন্তা করলেই শরীর শীতল হয়ে যায়। সাব্বির নামের এক যাত্রী বলেন, যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতে পারলে এক টানে বাড়ি চলে যাওয়া যায়; কিন্তু যত দুর্ভোগ এখানেই।
এ দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের ঢাকার আব্দুল্লাহপুর ও আশুলিয়া এলাকায় ভয়াবহ যানজটে পড়েন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই একই স্থানে কাটিয়ে দিতে হয় যাত্রীদের। একই পরিস্থিতি হয়েছে গাবতলী এলাকাতেও। সেখানেও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। একাধিক যাত্রী গাবতলী এলাকা থেকে জানিয়েছেন, গাবতলীতে পরিবহন সঙ্কটও ছিল। কোনো কোনো পরিবহনের নির্ধারিত গাড়ির জন্য মানুষেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ সময় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন।
গতকাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল কয়েকদিনের তুলনায় বেশি। বাস, ট্রেনস্টেশন ও সদরঘাট টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। সকাল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে চাঁদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের যাত্রীরা ভিড় জমায়। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় বরিশাল ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। বিকেলে সদরঘাট পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লঞ্চেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চের ভেতরে সিট না পেয়ে অনেকেই লঞ্চের ছাদে চড়েছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে ট্রেনেও। ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে দেখা গেছে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছাদেও কোনো জায়গা ছিল না ট্রেনগুলোর।
এ দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পরিবহনভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে; কিন্তু গতকাল পর্যন্ত যাত্রীরা বাড়তি ভাড়াই গুনেছেন। এমনকি কোনো কোনো বাসে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ৬০০ টাকার ভাড়া এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা রাখা হচ্ছে; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement