১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে চলছে সাজসজ্জা

ঈদে পর্যটন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

কক্সবাজার - ছবি : সংগৃহীত

ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরে পাঁচ দিনে দেশের পর্যটন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। পর্যটন খাত ছাড়াও ঈদ ও বাংলা বছরের প্রথম দিনে ঘিরে দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও চলছে সাজসাজ রব, চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরে দীর্ঘ ছুটি মিলছে, যা সচরাচর হয়নি। ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। যদিও এবার পর্যটন খাতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। তার পরও দীর্ঘ ছুটির কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের ঢল নামবে। অভ্যন্তরীণ এসব পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট, কুয়াকাটা। তবে ডলার সঙ্কটে এবার দেশের বাইরে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম জানিয়ে তারা বলেন, এর মধ্যে যারা বিদেশে যাবেন তাদের পছন্দে রয়েছে ভারতের কলকাতা, শিমলা, মানালিসহ নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ আর থাইল্যান্ড। পর্যটকদের সুবিধের কথা বিবেচনায় ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোও ফ্লাইট বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো: জিয়াউল হক হাওলাদার জানান, এক দিকে রোজার ঈদ, অন্য দিকে পয়লা বৈশাখ এই দুই উৎসব ঘিরে দেশের অর্থনীতির গতি বাড়ছে। তিনি বলেন, লম্বা ছুটি ঘিরে পর্যটক বরণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যাতে করে কোনো রকমের বিপত্তি ছাড়াই পর্যটকরা আনন্দে সময় অতিবাহিত করতে পারেন। তার ভাষ্য দেশে বছরে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে। যার ১৪ লাখ এই ঈদে ভ্রমণ করবেন। যা গতবারের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র দোকানি ও ব্যববসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে থাকেন। দেশের দোকান মালিক সমিতির হিসাব মতে, এ জাতীয় দোকানের সংখ্যা দেশে মোট ২৫ লাখের মতো। প্রতিটি দোকানে যদি গড় খরচ ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে মোট খরচ হবে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সুতরাং পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের অর্থনীতিতে লেনদেন হবে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ ঘিরে অতিরিক্ত চাপ সামালাতে ১৮টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল রুটে চলবে এই ফ্লাইটগুলো। বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রাও পয়লা এপ্রিল থেকে সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন চারটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে এখনো অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার।
বিদেশযাত্রা কম হওয়াকে দেশের পর্যটনের জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে টোয়াব বলছে, প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পায় দেশের পর্যটন খাত। বাড়তি আয়োজন থাকে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে পর্যটকরা আগ্রহ হারাবে।
এ ছাড়া পর্যটক বরণে ব্যাপক প্রস্তুতির সাথে পর্যটর কেন্দ্রগুলোতে অবস্থিত হোটেল মোটেল দিচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ছাড়। কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির একজন নেতা জানান, ইতোমধ্যে কক্সবাজারে প্রায় হোটেল-মোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এবারের ছুটিতে পর্যটকরা যেন হয়রানি না হয় সে জন্য টুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে সবাই কাজ করছে। তাদের প্রত্যাশ এবারে কক্সবাজারে তিন লাখ পর্যটক সমাগম হবে। এ দিকে পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের যাতায়াত বান্দরবানে। কিন্তু গত বুধবার থানচিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দু’টি ব্যাংক লুট ও বৃহস্পতিবার রাতে থানা আক্রমণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে গোলাগুলির ঘটনায় বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে দেশের পূর্বাঞ্চলের পর্যটনকেন্দ্র সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারের হোটেল-রিসোর্টের রুম অর্ধেকের বেশি বুকিং হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, পর্যটন খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, এর ৩০ শতাংশ হয় দুই ঈদে। এর মধ্যে রোজার ঈদে ২০ শতাংশ এবং কোরবানির ঈদে ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়। এবার তাই প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যাবসাহ হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
অন্য দিকে পর্যটকদের বরনে প্রস্তুত রয়েছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ইতোমধ্যে কুয়াকাটার অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশের নজরদারি। থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া জোরদার করা হয়েছে উদ্ধার কার্যক্রম। এ দিকে ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement