১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শেষ সময়ে মধ্যরাতেও সরগরম মার্কেট

-


ঈদ ঘনিয়ে আসায় শেষ সময়ে মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে রাজধানীর ঈদ মার্কেট। ফলে আশানুরূপ ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর প্রধান মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মার্কেটই মানুষে একাকার। দোকানে দোকানে ক্রেতার ভিড়। এর মধ্যে চলছে বিভিন্ন অফার। যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় থাকছে। শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে শাড়ি, জামা-কাপড়, জুতা, গয়না, ঘড়ি, কসমেটিকস পণ্যের শোরুমে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি।
ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পোলো শার্ট সব ধরনের জামা-কাপড়ের পসরা সাজিয়েছে এমব্রেলা। এখানে ৬ মাস থেকে ১২ বছরের শিশু ও বড়দের সবধরনের জামা-কাপড় রয়েছে। এর মধ্যে অনেক পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে তারা। এরকম আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ছাড় দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার শুরুতে ব্যবসা তেমন ভালো না হলেও শেষ সময়ে এসে জমেছে। তাতে তারা খুশি। তাদের প্রত্যাশা এর মাধ্যমে বিগত সময়ের লোকসান কিছুটা হলেও উঠে আসবে। তাদের ভাষ্য এবারের ঈদবাজারকে ঘিরে তারা খুব আশাবাদী। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় দোকান, শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকান পর্যন্ত কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠেছে।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এবারের ঈদবাজারে আড়াই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে। এর মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারেই লেনদেন হতে পারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর বাইরে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, মিষ্টির বাজার, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি অর্থ যোগ হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস এবং দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবীদের ঈদ বোনাসও যুক্ত হবে ঈদবাজারে। ঈদ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, দেশের অর্থনীতিও তেমনি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন এফবিসিসিআইর এক সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘সাধারণত রোজার ঈদ ঘিরে ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে এবারের রোজার ঈদ ঘিরে সেটি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারেই যোগ হবে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ধনীদের দেয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ যুক্ত হবে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য হবে ১ হাজার কোটি টাকা।

তার ভাষ্য ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আয়ের হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাসও ঈদের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। এ ছাড়া রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদের সময় প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়। এর সাথে যুক্ত হবে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস। এর বাইরে দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের অনলাইন বাজার। নিত্যনতুন পণ্যের সমাহার, বিভিন্ন ছাড় ও উপহারের কমতি নেই ভার্চুয়াল বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে অনলাইনে ঈদের বাজার জমজমাট। প্রতি বছরই ঈদের সময় অনলাইনে কেনাকাটা বাড়ছে। ফলে এবার শুধু অনলাইনে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
ঈদবাজারের বড় অংশজুড়ে রয়েছে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী। পোশাকের মধ্যে পাজামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, লুঙ্গি ও টুপি প্রধান। এরপর রয়েছে জুতা, প্রসাধনী, স্বর্ণালঙ্কার। আর উচ্চবিত্তের জন্য রয়েছে সোনা, ডায়মন্ডের অলঙ্কার ও গাড়ি। সবার জন্য অপরিহার্য সেমাই, চিনি, ছোলা, ডালসহ অনেক ভোগ্যপণ্য।


আরো সংবাদ



premium cement