আতঙ্কে পাহাড়ের বাসিন্দারা
ব্যাংক ডাকাতি-অস্ত্র লুটের ঘটনায় সাত মামলা- আলীকদম (বান্দরবান) সংবাদদাতা
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট এবং ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় বান্দরবানের রুমা ও থানচি থানায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রুমা থানায় চারটি ও থানচি থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকায় একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে জানা গেছে। এর আগে হামলাটি কেএনএফ সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়েছিল জানানো হলেও শুক্রবার বিকেলে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় অন্যরকম ভীতিকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন রুমা উপজেলার লোকজন। বেশির ভাগ বাসিন্দাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপ্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আর কেউ বের হলেও সন্ধ্যার আগে ফিরছেন। ঘরেও লোকজন নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না।
যদিও পুলিশ বলছে, লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা বলেন, বান্দরবানের কয়েকটি থানায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এ দিকে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো: রায়হান কাজেমী জানান, বান্দরবানের রুমা ও থানচি ব্যাংকে হামলা, ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট ঘটনায় রুমা থানায় অজ্ঞাতনামা ১৩০-১৫০ জনকে আসামিকে করে চারটি মামলা করা হয়েছে। সেই সাথে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করে বিভিন্ন ধারায় তিনটিসহ এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে।
এ দিকে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা ও থানচির তিনটি ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সেই সাথে পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে পাহাড়ে সন্ত্রাসী দমনে একসাথে কাজ করছে।
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকায় একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনাটি ‘ভুল বুঝাবুঝি’ বলে জানা গেছে। এর আগে হামলাটি কেএনএফ সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়েছিল বলে জানা গেলেও শুক্রবার বিকেলে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে মো: তারেক (২৬) নামে একজনের অবস্থা গুরুতর।
আহত আরকে শ্রমিক আরাফাত (১৮) শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে জানান, তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলীকদম থেকে একটি ইটভর্তি ট্রাক নিয়ে থানচির বাকলাই সড়কের নির্মাণ কাজের স্থলে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানচি বাজার এলাকায় গোলাগুলি ঘটনা ঘটলে তারা রাস্তার পাশে ইট আনলোড করে আলীকদমের উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। আসার পথে বৃহস্পতিবার মাঝ রাতে তাদের ট্রাকটি আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার নিরাপত্তা চৌকি এলাকায় পৌঁছলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে তারা হতভম্ব হয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালানোর সময় গাড়িতে থাকা শ্রমিক তারেক ও আরাফাত গুলিবিদ্ধ হন। তারা বর্তমানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি আরো বলেন, তাদের গাড়িকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কেএনএফ সন্ত্রাসীবাহী গাড়ি মনে করে ভুলক্রমে গুলি ছুড়ছিল। এতে তারেক ও আরাফাত আহত হন। তাদের গাড়িটি বর্তমানে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকার কালামিয়া পাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদকের হাতে আসা এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে গাড়িটির চালকের সিটে এবং দরজায় রক্তের দাগ এবং গাড়ির সামনের গ্লাসে গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
এ দিকে আলীকদম থানার ওসি খন্দকার তবিদুর রহমানের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, রাত পৌনে ১টার দিকে ২৬ কিলোমিটার এলাকার এ যৌথ তলাশি চৌকিতে হামলা চালায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গাড়িতে করে এসে তলাশি চৌকি ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এ সময় তলাশি চৌকিতে থাকা পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি করেন। পরে হামলাকারীরা পিছু হটে।’
আলীকদমে সতর্কাবস্থায় পুলিশ : রুমা ও থানচির ঘটনার পর থেকে আলীকদম থানার পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। তারা রাত-দিন সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের মধ্যবর্তী স্থান আলীকদম প্রেস ক্লাব চত্বরে পাহারায় আছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা