উখিয়ায় পাহাড় কাটায় বাধা, ডাম্প ট্রাকের চাপায় বিট কর্মকর্তার মৃত্যু

কক্সবাজারের উখিয়ায় গভীর রাতে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে ডাম্পট্রাকে ভর্তি করে মাটি পাচার করছিল কিছু বনদস্যু। খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) নামে বনবিভাগের এক বিট কর্মকর্তা। পাহাড়খেকোদের ব্যবহৃত ডাম্পট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন তিনি। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী নামে আরো একজন বনকর্মী আহত হয়েছেন। তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার বন বিট কর্মকর্তা (ফরেস্টার) সাজ্জাদুজ্জামান মাত্র তিন বছর আগে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি উখিয়ায় যোগ দেয়ার পর থেকে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ চালিয়ে আসছিলেন। এ কারণে উখিয়ার পাহাড়খেকো সন্ত্রাসী দলগুলোর সদস্যরা নবীন এ বিট কর্মকর্তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো: সরোয়ার আলম জানান, রাত ৩টার দিকে সাহরির সময় এমন জঘন্য ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান দুছরী সরকারি পাহাড় কেটে মাটি পরিবহনের খবর পেয়ে প্রতিরোধ করতে যান। সহকর্মীদের নিয়ে পাহাড় কাটার স্থলে গিয়ে দেখতে পান ডাম্পট্রাকে মাটি ভরা হচ্ছে। এ সময় সাজ্জাদুজ্জামান নিষেধ করলেও পাহাড় কাটার শ্রমিকরা তা না শুনে ট্রাকে মাটি ভর্তি করতে থাকে।
তিনি বলেন, বন রক্ষা করতে গিয়ে সাজ্জাদ নিজের জীবন দিয়েছেন। তার নির্মম মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী বন কর্মকর্তাকে হারালাম। পাহাড়খেকোদের প্রতিরোধে এই মুহূর্তে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া না হলে অচিরেই বন ধ্বংস হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে উখিয়ার বন রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানান, বিট কর্মকর্তা ডাম্পট্রাকটির চালককে দফায় দফায় মাটি পরিবহনে বাধা দেন। এ নিয়ে চালকের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাজ্জাদ স্থানীয় হরিণমারা নামক এলাকায় সড়কের ওপর মাটি বোঝাই ডাম্প ট্রাকটি আটকের জন্য দাঁড়িয়ে যান। তখন চালক দ্রুত ডাম্পট্রাক দিয়ে তাকে ইচ্ছে করেই চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদুজ্জামানের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মারা যান।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আরো জানান, ডাম্পট্রাকটির মালিক হরিণমারা গ্রামের সৈয়দ করিম এবং হত্যাকারী চালকের নাম বাপ্পা। কয়েক মাস আগে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মধুঘোনা নামক এলাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলমকেও অনুরূপভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন জানান, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে গিয়ে পাহাড়খেকো লোকজনের ডাম্পট্রাক পিষে বিট কর্মকর্তা নিহতের ঘটনার সাথে সাথেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। এ ঘটনায় জড়িত ট্রাকমালিক ও চালকসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু হয়েছে। ঘুমধুম এলাকা থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় ডাম্প ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।