প্রচারণার অভাবে ক্রেতাশূন্য বায়তুল মোকাররমের ইসলামী বইমেলা
- আবুল কালাম
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:১৪
রমজানের শেষ সময়েও ক্রেতাশূন্য বায়তুল মোকাররমে শুরু হওয়া মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা। ক্রেতার অভাবে ইতোমধ্যে মেলায় ৬৪ স্টলের মধ্যে ১০টি স্টল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্টলে বইয়ের বদলে বসেছে আতর টুপির দোকান। এ ছাড়া সরেজমিনে মেলার ভেতরে হকারদের কাপড় বিক্রি করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে মেলায় অংশ নেয়া বই বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতি বিক্রেতাই প্রচারণার অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, আগামীতে এ মেলায় তারা অংশ নাও নিতে পারেন। কারণ পুঁজি খাটিয়ে উল্টো যদি লোকশান টানতে হয় তবে এমন মেলায় অংশ নেয়ার কোনো যুক্তিকতা নেই।
তবে মেলায় ক্রেতা নেই স্বীকার করে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ফাউন্ডেশন বলছে, অন্যান্য স্টলে বিক্রি না হলেও তাদের বিক্রি ভালো।
গতকাল সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায় মেলার প্রধান গেটের সামনে একাধিক দোকান বসিয়ে কাপড় বিক্রি করছে হকাররা। হকারদের জটলায় বুঝার উপায় নেই যে এখানে একটি প্রবেশ গেট আছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমেই দেখা গেলো হকাররা কাপড় বিক্রি করছেন। মেলার যে বইয়ের স্টল দেয়া হয়েছে সেই স্টলগুলোর সাথেই দুইজন হকার কাপড়ের দোকান বসিয়েছেন। বইয়ের স্টলগুলোর দিকে তাকাতেই বিক্রেতাদের অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। ক্রেতাহীন মেলার প্রতিটি স্টলে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
মেলা ঘুরে দেখা যায় ইতোমধ্যে ১০টি স্টল বন্ধ করে বিক্রেতারা চলে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছে স্টল নং ২০, ১৫, ১৪, ৩৩, ৩৪, ৪০, ৪২, ৪৩, ৫৩, এবং স্টল নং ২৮। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াতে অন্যরা এসে আতর, টুপি তসবির দোকান খুলে বসেছেন।
মেলায় বিশ্ব কল্যাণ পাবলিকেশন্সের মালিক আব্দুর রহিম জানান, মেলা শুরুর পর কোনো বিক্রি নেই। প্রতিদিন অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তিনি জানান, মেলা শুরুর পর বিক্রি না হওয়াতে ইতোমধ্যে অনেকে স্টল ফেলে চলে গেছেন। মেলায় স্টলের ভাড়াও উঠেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রচারণার অভাবে আজ এ মেলার এমন অবস্থা।
আগে প্রচার চালালে ক্রেতারা আসত। বোখারি একাডেমির স্টলে থাকা মাজহার হোসেন বলেন, যারা আয়োজক তারাই প্রচার করে না। তাই এমন সম্ভাবনার মেলায় আজ আমাদের ক্রেতাহীন বসে থাকতে হচ্ছে। তার ভাষ্য এটাতো সরকারি মেলা কোনো প্রচার হলো না তা আমাদের বোধগম্য নয়। মানুষ জানলে অবশ্যই মেলায় আসত।
বার্ড কম্প্রিন্ট পাবলিকেশন্সের মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, মেলাটা জমত যদি প্রচারণা ঠিকমতো হতো। প্রচার হয়নি। তাই মানুষ আসেনি। সেই সাথে বড় বড় প্রকাশনা থাকলে আরো ভালো হতো। সাহিদ রিজভী নামের একজন ক্রেতা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলার ভেতরে ও গেটের সামনে হকারদের যে উৎপাত তাতে বুঝার উপায় নেই যে এখানে ইসলামী বইয়ের মেলা চলছে। প্রচার হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এদিকে আসছিলাম। তাই দেখতে পেয়ে মেলায় প্রবেশ করে বই কিনেছি। তিনি বলেন, একুশে বই মেলায় যেভাবে প্রচার হয় এ মেলায় সেরম প্রচার হলে মানুষের ভিড় হতো।
তাফহীম পাবলিকেশন্সের স্টলের আতর দোকানদার হাবিবুল জানান, বই ছিল তবে বিক্রি না হওয়াতে বই বাদ দিয়ে আতর দোকান দিয়ে বসেছেন। হুমায়রা প্রকাশনী স্টলের আতর বিক্রেতা মিজান জানান, বই বিক্রি না থাকায় স্টল ছেড়ে এরা চলে গেছেন। তাই তিনি দোকান নিয়ে বসেছেন।
এমদাদিয়ে কুরআন মহলের ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেমন বিক্রি দেখতেইতো পাচ্ছেন। বিক্রি না থাকায় একে একে বিক্রেতারা স্টল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ প্রচারের অভাব এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আয়োজকরা শুরুতে তারা বলল প্রচার চালাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা।
ফুলঝুড়ি স্টলের মালিক মোহাম্মদ কাওসার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ মেলায় এসে যে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাতে আমরা মর্মাহত। এমন চলতে থাকলে আগামীতে আর এতে অংশ নাও নিতে পারি।’
মেলায় আগত তাজুল ইসলাম স্বপন জানান, তিনি তার এক বন্ধুর ফেসবুকের মাধ্যমে মেলার বিষয়ে জানতে পেরে মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে অনেকবার মেলায় এসেছি। কিন্তু এমন ক্রেতাহীন মেলা দেখিনি। প্রচারের অভাবে এমন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য বইয়ের মেলায় যেভাবে প্রচার হয় এ মেলাতেও তেমন প্রচার প্রয়োজন ছিল। তাহলে এখানে পাঠকের ব্যাপক সমাগম হতো।
এ বিষয়ে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে থাকা আজিজুল কাইয়ুমের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় ক্রেতা নেই এটা ঠিক। যার কারণে অন্যারা তেমন বিক্রি করতে পারেনি। তবে আমাদের বিক্রি ভালো। প্রচার তেমন হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমিতে যেভাবে প্রচার হয় সেরকম করা হয়নি। মসজিদের মাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রমজানের শুরু থেকেই মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা শুরু হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে আয়োজিত এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
মেলায় মোট ৬৪টি স্টলে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ, তাফসির, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন বই স্থান পেয়েছে। এতে আকর্ষণীয় কমিশনে বই বিক্রি হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা