তাজমহলের আদলে নির্মিত শিমুলতলা জামে মসজিদ
- মেহেদী হাসান তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:১২
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় মসজিদটি আজো দাঁড়িয়ে আছে সমহিমায়। উপমহাদেশের সুন্দরতম স্থাপনা তাজমহলের আদলে নির্মিত অত্যন্ত চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর কারুকার্যে শোভিত এর ভেতর ও বাইরে। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় সব বয়সের মানুষের। সমজিদটি এক পলক দেখার জন্য দেশ বিদেশের পর্যটকরাও আসেন।
মসজিদটি ১৯৩৬ সালের পূর্বে তৈরি করা হয়েছিল সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামে। তবে গ্রামের বাসীন্দা তসকির উদ্দিন দাবি করেন এই মসজিদটির বয়স ১০০ বছর হবে। মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, জাদুকাটা নদী, বারেকটিলা, শহীদ সিরাজ লেক, হাওলী জমিদার বাড়ি, শিমুলবাগনসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটের মতো এই জামে মসজিদটিও সবার নজর কারবে বলে মনে করেন বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জুনাব আলীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরজমিন দেখা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন শিমুলতলা গ্রামের ভিতরে দুই কিয়ার জায়গা নিয়ে জামে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদটিতে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ, আটটি পিলার সাথেই রয়েছে একটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের ভেতরের উপরে গম্বুজে ও গম্বজসংলগ্ন কারু কাজ ব্রিটিশ আমলে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। আছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সমজিদটিতে তখনকার শিল্পীদের দৃষ্টি নন্দন করু কাজ। এই মসজিদে প্রায় ৩০০ মানুষ এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে।
গ্রামবাসী মিলে চাঁদা তুলে ও ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে সম্প্রতি মেরামত করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে বহু কষ্টে। তবে আরো সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন রয়েছে। মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী সরকারি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। মসজিদে গ্রামের মুসল্লিদের আগমনে জায়গায় সঙ্কুুলান হয় না। মসজিদটির আরো বড় করা প্রয়োজন এবং মাঠটি বড় করা হলে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামে জায়গার সঙ্কট দূর হবে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদটি তৈরি করতে মসজিদের পাশেই ইটের ভাটা তৈরি করে ইট আর চুনাপাথরের সংমিশ্রণে নির্মাণ কাজ শুরু করেন তৎকালীন সময়ের তালুকদার পরিবার। নির্মাণের প্রায় ১০০ বছরেও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, এই মসজিদটিতে ব্রিটিশরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যায় তখন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নামাজ আদায় করেছিল তখনকার স্থানীয় মানুষজন।
মসজিদের ইমাম জালাল উদিন জানান, সমজিদটি সংস্কার ও মেরামতের জন্য অর্থের প্রয়োজন হলেও সরকারিভাবে তা পাওয়া হয়নি আজো। তাই গ্রামবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতার কোনো রখমে এগিয়ে চলছে। মুসল্লিদের মসজিদে জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় আরো বড় করাসহ কিছু সংস্কার করা খুবেই প্রয়োজন হলেও অর্থ সঙ্কটের কারণে এগোতে পারছেন না মসজিদ কমিটি।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান, প্রাচীন ও দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটির মতো উপজেলার আর কোনো মসজিদ নেই। মসজিদটিকে মেরামত করে আধুনিকভাবে আকর্ষণীয় করা হলে উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর মতো এই মসজিদটিও সবার কাছে আকর্ষণীয় হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) খালেদ বেগম জানান, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত শিমুলতলা জামে মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। মসজিদটিকে আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবেই প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, মসজিদটি উপজেলার সুপ্রাচীন, দৃষ্টি নন্দন ও আকর্ষণীয়। ছোট বেলায় মসজিদটির পাশে শিমুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই মসজিদটিকে সরকারিভাবে রক্ষাণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়ন করার জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানাব।