০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

ডেঙ্গুতে আরো ১৪ মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ২৬৫৩

বেডের অভাবে রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে শিশুকে স্যালাইন পুশ করে ফ্লোরের বিছানায় নেয়া হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -


আবারো সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হলো ডেঙ্গুতে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬৫৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি মৌসুমে গতকাল পর্যন্ত মোট ২১৫ জনের মৃত্যু হলো ডেঙ্গুর সংক্রমণে এবং মোট ৪০ হাজার ৩৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসার জন্য। এর বাইরে আরো অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন; কিন্তু সরকারি হিসাবে কেবল যারা ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসার জন্য তাদেরই নামগুলোই তালিকাভুক্ত করা হয়।
গতকাল সকাল পর্যন্ত যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এদের ১০ জনেরই ঢাকার হাসপাতালগুলো মৃত্যু হয়েছে। চলতি জুলাই মাসে দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৬৮ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৩৬৩ জন। জুলাই মাসের আগের গত ছয় মাসে দেশে সাত হাজার ৯৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং রোগটিতে মারা গেছেন ৪৭ জন।

আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসকে ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হয়; কিন্তু জুলাই মাসেই যে হারে মানুষ এডিস-বাহিত এ জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে তাতে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে যে আরো বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে এবং মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে বর্ষাকাল চলে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টির ধরনের পরিবর্তন আসবে। এমনিতেই গত আষাঢ় মাসে বৃষ্টি কম হয়েছে, চলতি শ্রাবণ মাসেও একই অবস্থা। ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য এ সময়টা বেশ অনুকূল। ফলে সামনের দিনগুলোতে যে মশার বৃদ্ধি ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। ফলে হাসপাতালগুলোতে এখনকার চেয়ে অধিক হারে রোগী আসবে এবং মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এখনকার চেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় ভাইরোলজিস্টরা মশক নিধনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। দেশব্যাপী ব্যাপক ভিত্তিতে মশক নিধন অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে ধীরে ধীরে। আগে ডেঙ্গু আক্রান্তের বেশির ভাগই ঢাকায় পাওয়া যেত; কিন্তু এখন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনুপাত প্রায়ই সমান সমান হচ্ছে। কোনো কোনো সময় ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি ঘটছে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যে দুই হাজার ৬৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩২৭ জন এবং ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য অংশে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩২৬ জন। ঢাকায় মাত্র একজন বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ দিকে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া এমন হাসপাতালগুলোর মধ্যে মুগদা হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে মুগদা হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি করা হবে না। এখানে যেসব রোগী আসবে তাদের মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেয়া হবে।
এ ধরনের একটি ঘটনা নিয়ে গতকাল মুগদা হাসপাতালে আসা এক শিশু ডেঙ্গু আক্রান্তের ভর্তি হওয়াকে কেন্দ্র করে চিকিৎসককে পেটানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ওই শিশুকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার যথাযথ চিকিৎসা চলছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আহমেদুল কবির ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যারা চিকিৎসককে শারীরিক লাঞ্ছিত করেছে তাদের পুলিশে দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement