০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

কুড়িগ্রামের পানিবন্দী এলাকা : নয়া দিগন্ত -


-৬৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী
-দুর্ভোগে মানুষ দিশেহারা
-বগুড়ায় যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় ৬২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া নীলফামারীতে বন্যার পানি কমলেও এখনো প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী। কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অনেকের পরিবার বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। রান্না করা বন্ধ হয়ে গেছে। অসুখ বিসুখ বেড়ে গেছে। অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাবার সঙ্কট। অপরদিকে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, বিপদসীসমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা ও দুধকুমারের পানি। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চলগুলো। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। অনেক চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও নিচু এলাকার কাঁচাপাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে এসব এলাকার মানুষের। অনেকে উঁচু স্থান ও নৌকায় বসবাস করছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আব্দুল মজিদ জানান, আমার বাড়ির চাল পর্যন্ত পানি হয়েছে। বউ বাচ্চাকে উঁচু স্থানে রাখছি। নৌকাযোগে ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র খুলে নিচ্ছি। গতকাল ১০ কেজি চাল পেয়েছি। চাল পেলে কি হবে রান্না করা খুব কষ্ট। খাবার পানিরও খুব কষ্ট, অনেক দূর থেকে পানি এনে খাইতে হয়। সবমিলিয়ে অনেক কষ্টে আছি ভাই।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাডোবা চরের হাসিনা বেগম বলেন, রাত থেকে আমার ১ বছর বয়সী বাচ্চাটা অসুস্থ। প্রচুর জ্বর সর্দি আসপাশে কোনো ডাক্তার নাই। বাচ্চাটা শুধু কান্না করছে। তার কান্না দেখে খুব কষ্ট লাগছে। তাই আজ নৌকাযোগে মোল্লার হাটে নিয়ে যাচ্ছি। কই আমাদের এখানে তো কোনো সরকারি মেডিক্যাল টিম আসে নাই।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামের নদ নদীর পানি বৃদ্ধির পর বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও এখনো দুধকুমার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ধরলা, দুধকুমারের পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, পানিবন্দী মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। গতকাল ৬শ’ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আজো ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিস্তা নদীর পানি কমলেও নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কয়েকটি চর গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। এইসব পরিবারগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ নানা দুর্ভোগে দেখা দিয়েছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার এবং ৯টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে ডিমলা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৫টি চরগ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে পানি উঠে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসফাউদ দৌলা জানান, গতকাল শনিবার সকালে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কমতে শুরু করে। উজানে ঢল বাড়লে যেকোনো সময় তিস্তার পানি আবার বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।
জাগো নিউজ জানায়, বগুড়ায় বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে যমুনা নদীর পানি। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে নদীভাঙন শুরু হয়েছে বগুড়ার তিন উপজেলায়। ভিটেমাটি ছাড়ছেন এসব এলাকার মানুষ। সারিয়াকান্দিতে ১০০ মিটারের মধ্যে হুমকিতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল ৩টায় যমুনার পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৮৪ মিটার। শনিবার বিকেল ৩টায় পানির উচ্চতা ১৬.১৬ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানির বিপদসীমা ১৬.২৫ মিটার। অর্থাৎ পানি বিপদসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিনে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১০০টির বেশি পরিবার এলাকা ছাড়া হয়েছেন। কয়েকদিন আগেই বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৫০টি পরিবারের লোকজন। ভাঙন এলাকায় নদী তীরের ৫০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন প্রায় ১৫টি পরিবারের লোকজন। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে যমুনায়। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এ গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধারাবর্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ভাঙন এলাকার মূল তীর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। সেখানে চলছে নতুন ভবন নির্মাণকাজ। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামের লোকসংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে এ উপজেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ধারাবর্ষা ফরেস্ট বাগান। যেখানে ১ হাজার হেক্টর জমিতে সরকারের রয়েছে কয়েক কোটি টাকার কাষ্ঠল মেহগনি বৃক্ষ। যেখানে প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থী আসেন বনভোজন করতে।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, যেহেতু উত্তরে পানি কমার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি দু-একদিন বৃদ্ধি পেয়ে আবারো কমতে শুরু করবে। বোহাইল ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকাটি শিগগির পরিদর্শন করে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
খালেদা জিয়ার নিঃস্বার্থ মুক্তি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল বাকৃবিতে বাংলা ব্লকেড : তৃতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ মস্তিষ্কের যত কর্মকাণ্ড লংগদুতে বিদেশী ব্রান্ডের সিগারেটসহ আটক ৩ বগুড়ায় রথযাত্রায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাজারে চকচকে চাল আর থাকবে না : খাদ্যমন্ত্রী আসামে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ বিশ্বে জুনে তাপমাত্রার রেকর্ড ২০২৩ সালকে ছাড়িয়েছে সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা : আবহাওয়া অধিদফতর ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’ বাংলাদেশকে বিদায় বললেন মোশতাক, গেলেন ইংল্যান্ডে

সকল