০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

উজানের ধেয়ে আসা ঢলে বন্যা আতঙ্ক

সুরমায় ৭৮ ও তিস্তার ৩৫ সেমি বিপদসীমার উপরে পানি
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বক্তারপুর গ্রামে বন্যাকবলিত রাস্তা : নয়া দিগন্ত -


উজান থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঢলে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জ ও নীলফামারীতে। সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার এবং নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দোয়ারা বাজারের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন এবং নীলফামারীর ১৫টি ইউনিয়ন ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা,খাসিয়ামারা, চিলাইসহ সব নদ-নদীর পানি ফের বাড়ছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও, শরিফপুর, মিরপুর, কাউয়ারগর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া, বক্তারপুর, চকিরঘাট, দোয়ারা সদর ইউনিয়নের পর্মশরিফপুর, মাজেরগাঁও, রাখালকান্দি গ্রামসহ আরো কয়েকটি গ্রাম। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার ওইসব এলাকায় ঘুরে এই দৃশ্য দেখা যায়।

এ ছাড়াও সীমান্তবর্তী এই উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কে পানি ওঠায় উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সীমান্তবর্তী সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ওমর ফারুক জানান, ভারত থেকে ধেয়ে আসা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের অধিকাংশ বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন দুপুরে এভাবে পানি বাড়ে ও বিকালের দিকে পানি নেমে যাচ্ছে। তবে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও হচ্ছে এলাকার মানুষজন। এতে করে আতঙ্কে দিন পার করছে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ভারতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পানিতে পাহাড়িয়া নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে, দ্রুতই পানি কমে যাবে।

দুয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ মুর্শেদ মিশু জানান, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সুরমা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে।
উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন দুপুর ১ থেকে ২ টার দিকে উপজেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পায়। সন্ধ্যার দিকে আবার পানি নেমে যায়। দুর্যোগপূর্ণ কোনো পরিস্থিতি এলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি ক্রমে বাড়তে থাকায় নদী ঘেঁষা জনবসতির মানুষজন আতঙ্কে রয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং বিকেল ৩টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি আরো বেড়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, ভারতে অংশের দোমহনি ও মেখলিগঞ্জে তিস্তায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় সেখানে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। সেই পানি হু হু করে ঢুকে বাংলাদেশে। ফলে গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চরের মানুষজনের বসত বাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। তিস্তার পানি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় এসব এলাকার মানুষজন চরম আতঙ্কে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসফাউদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিকেলের পর থেকে হু হু করে বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সতর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত তিনদিন ধরে পানি বাড়ার সাথে সাথে নতুন নতুন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। নদী পাড় ও নিম্নাঞ্চলের আখ, পাটসহ অন্যান্য ফসলাদি বিভিন্ন স্থানে ডুবে গেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে বিভিন্ন পয়েন্টে পাড়ে পাড়ে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গতকাল দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের মণ্ডলবাজার, নয়াগ্রাম, বউলাতলী, বড়খাল এবং বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া, চর পোল্যাকান্দি, শেখপাড়াসহ নানা স্থান পরিদর্শনে ভাঙনের এসব দৃশ্য দেখা গেছে। দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী সড়কের মণ্ডলবাজারের পশ্চিমে ব্যাপক ভাঙন চলছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে চলাচল বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি মাপক আব্দুল মান্নান জানান, যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাংধরা ইউনিয়নের হাড়–য়াবাড়ী পশ্চিমপাড়া খেয়াঘাটে পানিতে ডুবে অহিলা (৬৫) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তিনি পাররামপুর ইউনিয়নের ডিগ্রীর চর এলাকার নূর মোহাম্মদের কন্যা বলে জানা গেছে। ঐ দিন সকালে অহিলা খাতুন বাড়ী থেকে বের হলে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯/১০ টার দিকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’ দ্বীন কায়েমে উলামা-মাশায়েখদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : রফিকুল ইসলাম খাঁন ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণে ৫ জন নিহত ফরিদপুরে পর্দাকাণ্ডের হাসপাতালে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড! কারা জড়িত? নিয়ামতপুরে ভটভটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত ২ খালেদা জিয়ার নিঃস্বার্থ মুক্তি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল বাকৃবিতে বাংলা ব্লকেড : তৃতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ মস্তিষ্কের যত কর্মকাণ্ড লংগদুতে বিদেশী ব্রান্ডের সিগারেটসহ আটক ৩ বগুড়ায় রথযাত্রায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাজারে চকচকে চাল আর থাকবে না : খাদ্যমন্ত্রী

সকল