২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
রাজপথে মৃত্যুর হানা

শিশু ও স্কুলছাত্রসহ ৮ জন নিহত

-

হবিগঞ্জে পৃৃথক ঘটনায় পাঁচজনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ মাসের এক শিশু এবং ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রসহ আটজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এসব দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটির মা-সহ আরো অন্তত পাঁচজন আহত হন।
সিলেট ব্যুরো জানায়, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও চুনারুঘাট উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল সকালে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- এক অটোরিকশা চালক, দু’জন অটোরিকশা যাত্রী, এক স্কুলছাত্র ও একজন বৃদ্ধ। পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল ভোরে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের সুদিয়াখলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকগামী বাসচাপায় অটোরিকশা চালকসহ তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের মৃত আবদুল হকের ছেলে অটোচালক রফিক মিয়া (৩৫), বানিয়াচং উপজেলার রঘু চৌধুরী পাড়ার আজির হোসেনের ছেলে জিয়াউল হক (৩৬) ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে মুছা মিয়া (৬৪)।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক কামাল বলেন, দু’জন যাত্রী নিয়ে অটোরিকশাটি শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ যাওয়ার পথে সুদিয়াখলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকাগামী মর্ডান পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে অটোরিকশার চালকসহ তিনজনই মারা যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
একই দিন সকালে নবীগঞ্জ উপজেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী এক মোটরসাইকেলের ধাক্কায় শিবলু হাসান (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ জানান, নিহত শিবলু মোড়াউড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ও দিনারপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহীও গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অন্য দিকে একই দিন সকালে চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি এলাকায় বাসচাপায় মো: লেচু মিয়া নামে এক বৃদ্ধ পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহত লেচু মিয়া মাধবপুর উপজেলার খড়কি গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জেলার মধুপুর উপজেলায় গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধুর দু’জন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের গারোবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সাব্বির আলম (১৮) ও মো: হাবিব (১৭)। সাব্বির টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার টেপি কুশারিয়া গ্রামের মো: সুরুজ আলীর ছেলে এবং হাবিব একই গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। এ ঘটনায় আহত তরুণ সাদিককে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মধুপুর থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, তিন বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল। দুপুর ১২টায় গারোবাজার হাজী বাড়ির মোড় এলাকায় তারা মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের এক গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই সাব্বির ও হাবিরের মৃত্যু হয়। তিনি আরো বলেন, নিহত দু’জনের লাশ থানায় এনে রাখা হয়েছে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আহত সাদিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানের যাত্রী ৯ মাসের এক শিশু নিহত ও আরো চারজন আহত হয়েছেন। নিহত শিশু (মারিয়া) মোরেলগঞ্জ উপজেলার আমতলী গ্রামের জুয়েল সরদারের মেয়ে। আহতরা হলেন- শিশুটির মা নাসরিন বেগম (৩১), ভ্যানচালক আ: লতিফ (৬৮), ভ্যানচালকের মেয়ে এলমা আক্তার (২৬), এবং মোটরসাইকেল চালক সিয়াম সরদার (২৩)। এদের মধ্যে গুরুতর আহত শিশুটির মা নাসরিন বেগম খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। আহত অন্যদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার রাত ৮টায় উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর-আমড়াগাছিয়া সড়কের শহিদ মুন্সির বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নাসরিন বেগম শিশু সন্তানসহ ভ্যানচালক নানা আ: লতিফের বাড়ি রাজাপুর গ্রামে বেড়াতে আসেন। সেখান থেকে নানার ভ্যানে করেই তারা ফিরছিলেন খোন্তাকাটা গ্রামে নাসরিনের বাবা নজরুল হাওলাদারের বাড়ি। ওই ভ্যানে লতিফের মেয়ে এলমাও ছিলেন। ভ্যানটি শহিদ মুন্সির বাড়ির সামনে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে শিশুসহ ভ্যানের পাঁচ যাত্রীই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে শরণখোলা হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে শিশু মারিয়ার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে গতকাল ভোরে মারিয়া মারা যায়। শরণখোলা থানার ওসি ইকরাম হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement