০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

প্রচণ্ড তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং

তাপদাহে অতিষ্ঠ শ্রমজীবীরা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। ছবিটি রাজধানীর লালবাগ থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

-ডলার সঙ্কটে কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না
-কয়লা সঙ্কটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ
-অসহনীয় ভোগান্তির শিকার মানুষ

দেশে বইছে প্রচণ্ড তাপদাহ। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। দুপুরে ঘর থেকে বের হওয়ায়ই দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ প্রচণ্ড গরমের মাঝে লোডশেডিংও হচ্ছে সমানতালে। একে তো অসহনীয় গরম, এরও পর লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কী শহর আর কী গ্রাম সব জায়গায়ই একই অবস্থা। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে এ লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। আগের দিন অর্থাৎ সোমবারে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সম্ভাব্য লোডশেডিং দেখানো হয়েছিল ১৬০ মেগাওয়াট। ১৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সম্ভাব্য উৎপাদন দেখানো হয়েছিল ১৪ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জ্বালানি সঙ্কটে উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা সঙ্কটে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। কয়লার মজুদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর। কয়লা আমদানি সম্ভব না হলে সামনে এ লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। রামপুরা থেকে মনির হোসেন নামক এক বাসিন্দা বলেন, দিনে রাতে তিন থেকে চারবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এক দিকে অসহনীয় গরমে দুপুরে ঘর থেকে বের হওয়ায়ই দুষ্কর, এরও পর লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় গরমে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। তিনি জানান, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। জনগণের ঘাড়ে বাড়তি দামের বোঝা চাপানো হয়েছে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। অপর একজন গ্রাহক বলেন, দায়মুক্তি আইন করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। অথচ ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতি বছরই জনগণের অর্থে ১৫ হাজার কোটি থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা পকেট ভারী করা হচ্ছে কোম্পানির মালিকদের। ওই গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করা হয়নি। এমনকি বড়পুকুরিয়া বাদে দেশের অন্য খনিগুলো থেকে কয়লা উৎপাদন করার তেমন কার্যকর পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। আর এর দায় জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কয়লা উৎপাদন করা হলে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হতো না। কিন্তু এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসছে। প্রতি মাসেই গড়ে দেড় বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এর গন্তব্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা যাচ্ছে না। এখন ডলার সঙ্কটের কারণে কয়লা আমদানি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানিনির্ভর অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোরও কয়লার মজুদ ফুরিয়ে আসছে। এ মুহূর্তে জরুরিভিত্তিতে কয়লা আমদানি করা না গেলে কয়লানির্ভর অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement