০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

ঈদবাজারে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

রাজধানীর মৌচাক এলাকায় ফুটপাথে জমজমাট ঈদবাজার : নয়া দিগন্ত -


তিন সন্তানসহ বসুন্ধরা মার্কেটে এসেছে কামরুল ইসলাম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। বললেন ‘ভাই শপিংমলে এসে মাথা গরম। কাপড়ের এতো দাম। বেকুব হয়ে গেছি। কারটা কিনবো কারটা বাদ দেবো তারও কোনো কুল পাচ্ছি না। কারণ যে টাকা ঈদের জন্য বরাদ্দ রেখেছি তাতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের পাঁচজনের কেনাকাটা অসম্ভব। এখন নিজেরটা আপাতত কিনবো না। বাকিগুলো যদি এই বাজেটে শেষ করতে পারি তাও শুকরিয়া’।
মার্কেটের সপ্তম তলায় ইনফিনিটিতে দেখা মিললো কিবরিয়া নামে মধ্য বয়সী একজনের সাথে। শপিংয়ের বিষয় কথা বলতে গিয়ে তার ভাষ্য, ‘ভাইরে মার্কেটে আজ একা এসেছি। ভাবছি আগে দাম যাচাই করি। পরে বউ বাচ্চাকে নিয়ে আসবো। কিন্তু মার্কেট ঘুরে তো হতাশ হয়ে গেলাম। ক্যামনে কী করবো। দাম যা দেখলাম তাতে আমার বাজেট কুলাবে না। একটা বাদ দিয়ে অন্যটা করতে হবে। বাজেটে কাটছাঁট না করলে মনে হচ্ছে কোনোটাই হবে না’।


এপেক্স জুতার দোকানে জুতা দেখছিলেন মগবাজার থেকে আসা সিথি। কেমন চলছে ঈদ মার্কেট এমন প্রশ্নে অনেকটা ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘ইনকাম না বেড়ে যদি পণ্যের দাম বাড়ে তবে ক্যামন চলছে এটা বুঝে নেন’।
সিথি জানান, স্বামীসহ পরিবারের তাদের সদস্য চারজন। এখন তার যে বাজেট তা সঙ্কুলানে নাভিশ^াস উঠছে। কারণ যে বেতন পান তাতে বাসা ভাড়া আর প্রতিদিনের খরচের পর মাস শেষে আর হাতে কিছু থাকে না। ফলে ঈদ সামনে রেখে শপিংয়ে অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তাদের জন্য ভারী বোঝা। শুধু কামরুল কিবরিয়া আর সিথি নয়, তাদের মতো সব মধ্যবিত্তের এখন একই অবস্থা।
অন্য দিকে মধ্যবিত্তের বাইরে নিম্নবিত্তের অবস্থা আরো ভয়াবহ। দিন আনি দিন খাই করে যাদের সংসার চলে তাদের ঘরে ঈদ আনন্দ বলে কিছু নেই।


মৌচাকের সামনের ফুটপাথে ক্রেতার ভিড়ে কাপড় দরদাম করছিলেন জহির মিয়া। তিনি জানান, একটা অফিসে তিনি সহকারীর কাজ করেন। আজ স্ত্রী-সন্তানদের জন্য ঈদের শপিং করতে বের হয়েছেন। তিনি জানান, তিনি বাড়িতে যাবেন কি না তা অনিশ্চিত। তাই আগে ভাগেই কাপড় কিনে পাঠিয়ে দেবেন।
জহির জানান, এবার কাপড়ের দাম বেশি। তাই যে বেতন পান তাতে ঈদ শপিং করে বাড়িতে গেলে খরচে পোশাবে না। তাই চিন্তা করছেন নিজে না গিয়ে বউ বাচ্চাদের জন্য কাপড় কিনে পাঠিয়ে দেবেন। তার ভাষ্য ‘ভাই আমার আনন্দ সন্তানরা। তারা নতুন জামা পরলেই আমার পরা হবে। এ জন্য নিজে না কিনে তাদের জন্য কিনছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা’।
একই অবস্থার কথা জানালেন ইমরুল। তিনি নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি করেন। তার ভাষ্য, বেতন যা পান তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালান। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন মাস না যেতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। এমন ব্যয় বৃদ্ধি তাদের জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে সামনে ঈদ তাই চিন্তা করছেন কিভাবে কী করবেন। কারণ নিজের জন্য না হলেও অন্তত পরিবারের জন্য কিছু শপিং করতে হবে।
ফুটপাথে ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরে করোনায় মানুষ কম হলেও এ সময়ে বিক্রি খারাপ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাগম বেশি হলেও পণ্য কম কিনছেন। তারা বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই মানুষ এখন কোনো মতে চলতে চেষ্টা করছে বলেই বিক্রি কম হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement