২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অভ্যন্তরীণ ঋণের বেশির ভাগ নেয়া হচ্ছে ব্যাংক থেকে

বাজেট ঘাটতি পূরণ
-

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেড়েই চলেছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ঋণ নেয়া হচ্ছে ব্যাংক খাত থেকে। অন্য দিকে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত বিশেষত সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমেছে। তবে এ খাতে সরকারের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি। তাই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেয়, এর দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে এ খাতের সুদ পরিশোধে। উলটো, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের দায়ও মেটানো হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নেয়া হয়েছিল ৭৯ হাজার ২১১ কোটি টাকা। এটি অভ্যন্তরীণ ঋণের ৭৩ শতাংশ। ব্যাংক খাতের মধ্যে ট্রেজারি বন্ড থেকে ৪৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, ট্রেজারি বিল থেকে ২৫ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ও সুকুক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে।

অন্য দিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম। তবে ডিসেম্বরে এসে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নিট ঋণ নেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এটি অভ্যন্তরীণ ঋণের মাত্র ২৭ শতাংশ। ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা (বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা) এবং অন্যান্য খাত থেকে ৯ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, সঞ্চয়পত্র খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম তথা ডিজিটালাইজ করা, বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ ও সুদের হার কমিয়ে আনা ইত্যাদি কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আগের তুলনায় কমেছে এবং পাশাপাশি এ খাতে সরকারের ঋণনির্ভরতাও কমেছে। শুধু তা-ই নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়কালের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তো বাড়েইনি, উল্টো, গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নিয়েছে বেশি।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণের সুদ (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এটি বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। আলোচ্য অর্থবছরে সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে ২৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের বিপরীতে ৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করা হয়েছে।

অন্য দিকে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ব্যয় হয়েছে। এ খাতে সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement