জয় পেতে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের দিকে নজর প্রার্থীদের
- আবুল কালাম আজাদ বগুড়া অফিস
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোট পেতে প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও নির্বাচনী উত্তাপ নেই। ভোটারদের মাঝে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি-জামায়াতবিহীন এই নির্বাচনে বগুড়া সদর আসনে ৪৩ বছর পর জয় পেতে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
বগুড়া-৬ : বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে সদর আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। এরপর দীর্ঘ সময় পরও আর কোন জয় পায়নি। ১৯৭৯ সালে বিএনপি, ১৯৮৬ সালে জামায়াত, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মুখে বিনাভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি শপথ না নেয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মো: সিরাজ নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করায় আবারো উপনির্বাচন হচ্ছে। এ আসনে পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলতে তাই আওয়ামী লীগ পুরোদমে মাঠে নেমেছে। ৪৩ বছর পর জয় পেতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালসহ কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বগুড়ার নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। গতকাল নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন জনসভা ও পথসভায় বক্তব্য দেন। নির্বাচনে ১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র গ্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল (কুড়াল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক), আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (একতারা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মো: নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক (গোলাপ ফুল), জাসদের (ইনু) প্রার্থী ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (মাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল) ও রাকিব খান (কুমির )। এর মধ্যে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি। নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত না থাকলেও নৌকার বিজয়ের গলার কাঁটা হিসেবে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক)। তিনি বিগত বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান। তাই তাকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ দিকে দিনের বেলা নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে রাতের বেলা অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী মান্নানের সাথে দেখা করেন বলে জোর প্রচার রয়েছে। তাদের দ্বৈত আচরণে নৌকার পক্ষের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকের সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদলের সাথে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থক ভোটাররা কুড়াল প্রতীকে ভোট দিলে ভোটের ফলাফল সরকার বাদলের পক্ষে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বগুড়া-৪ : কাহালু সংবাদদাতা এম এ কাদের জানান, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এলাকার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও শরিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। মাঠে ৯ জন প্রার্থী প্রচারণায় থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উপনির্বাচন নিয়ে নেই তেমন আগ্রহ। ভোটের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে না। জাসদ নেতা তানসেন উপনির্বাচনে মশাল মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের নেতারা থাকলেও সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে না। মাঠ পর্য়ায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্ন প্রার্থীর সাথে দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য ৮ প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক (লাঙ্গল), জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির তাজ উদ্দিন মণ্ডল (ডাব), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান কাজল (ট্রাক), সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল), আশরাফুল হোসেন আলম হিরো আলম (একতারা), অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মণ্ডল (কলার ছড়ি) ও গোলাম মোস্তফা (দালান মার্কা)। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক ভোটারদের পক্ষে টানতে জাসদ, জাপাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নানা কৌশল গ্রহণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের মধ্যে কুড়াল ও ট্রাক মার্কা বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে শোনা যাচ্ছে। প্রার্থীদের ছবি সংবলিত ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে হাটবাজার ও গ্রাম-মহল্লার ওলিগলি। প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি ও সুখ-দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার করছেন। তবে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির মতো বড় প্রতিপক্ষ না থাকায় উত্তাপ নেই। বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। বিএনপি দলীয় এমপি মোশারফ হোসেন গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা