২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ছয় বছর আগের তথ্য দিয়ে চলছে দারিদ্র্য কার্যক্রম

-

দেশে অতিদরিদ্র ও দরিদ্রের তথ্য গত ছয় বছর আগের। আর সেটা দিয়েই চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম। কোভিড-১৯ মহামারীর পর দেশে বর্তমানে দরিদ্রতার হার কত তার প্রকৃত তথ্য নেই। এখনকার সে তথ্য অনুমানভিত্তিক। তবে চূড়ান্ত হিসাবে দেশে কত পরিমাণ অতিদরিদ্র, হতদরিদ্র এবং দরিদ্রতা আছে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক তথ্য তিন মাস পর অর্থাৎ আগামী মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে এ সংক্রান্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মাঠ পর্যায়ে জরিপের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে গত ২০১৬ সালে এই খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ১৯৭৩-৭৪ সালে হাউজ হোল্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে পরিচালনা করা হয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ‘হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস)-২০২২’ বা ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপের’ বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর)। এ জরিপের মাধ্যমে দেশের বর্তমান দরিদ্র ও অতি দরিদ্রের সংখ্যা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধীনে প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ জরিপ চালানো হয়। তবে এবারের জরিপের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ জরিপের মাধ্যমে আগামী বছরের মার্চ মাসে দেশের দরিদ্র ও অতিদরিদ্রের প্রাথমিক চিত্র পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবারের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা সঠিকভাবে লিখে রাখতে প্রতিটি পরিবারকে একটি করে ডায়েরি দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্রে আনা হয়েছে নতুনত্ব। ভোগ করা খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা তৈরিতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৬ সালের জরিপের হিসাবে নেয়া খাদ্যদ্রব্যের সংখ্যা ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে এখন ২৬৫টি করা হয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য ও সেবার সংখ্যা ২১৬ থেকে বাড়িয়ে এখন ৪৪১টি করা হয়েছে। এসডিজির প্রয়োজনে স্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর টিকার তথ্য এবং পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা সংবলিত নতুন সেকশন যোগ করা হয়েছে প্রশ্নপত্রে। তথ্য সংগ্রহকারীদের ২১ দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করেই মাঠে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে গতকাল সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো: কাউসার আহাম্মদ তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি রাজধানীর আদাবরে জরিপের ১৮১ নং পিএসইউ-এর নির্বাচিত খানাসমূহে চলমান তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ড. দিপংকর রায়, প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রকল্পের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জুনাঈদ ভূঁইয়া, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা স্বপন কুমার, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এস এম আনোয়ার হোসেনসহ প্রকল্প টিমের অন্য সদস্যরা।
আর গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বীরহাটাব গ্রামে দেখা যায়, তথ্য সংগ্রহকারীরা তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় সংগ্রহকারী সাইফুল ইসলাম, ডালিয়া, এনামুল হক ও ফাতেমার সঙ্গে। তারা বলছেন, তথ্য সংগ্রহের জন্য পূর্ব নির্ধারিত একেকটি বাড়িতে তারা বছরে ২০ দিন করে এসেছেন। ১২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রশ্নপত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন। খানার বা পরিবারের তথ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বেতন ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের অবস্থা সম্পর্কে জেনেছেন। একই সঙ্গে অকৃষি প্রতিষ্ঠান, গৃহ সংক্রান্ত তথ্য, কৃষি, অন্যান্য সম্পদ ও আয়, ভোগকৃত খাদ্যদ্রব্য, খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য, সেবা ও খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন তারা।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা এক দিন পর পর আমার বাড়িতে এসেছেন। আমি যেসব তথ্য দিতে পারিনি তারা সে জন্য আমার ছেলে ও মেয়ের (যারা ঢাকায় থাকেন) মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের কল্যাণে আমি তাদের সবসময় সহযোগিতা করেছি।
প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জরিপের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত ২০১৬ সালে পরিচালিত জরিপে ক্যাফে বা কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড ফিল্ড ইন্টারি পদ্ধতি ব্যবহার। এবার সেটি পরিবর্তন করে ক্যাপি বা কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরাসরি তথ্য সংগ্রহকারীদের তথ্য ল্যাপটপের মাধ্যমে এন্ট্রি করা হয়েছে। মানুষ যেসব খাদ্য খায় তার ওজন সঠিকভাবে নিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহকারীদের ওয়েট স্কেল বা ওজন মাপার মেশিন দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের (এইচআইইএস)-২০২২’ মাঠ জরিপের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়েছে শুক্রবার। এবারের জরিপের প্রাথমিক তথ্য তিন মাসের মধ্যেই আগামী মার্চের মধ্যে জানা যাবে। এইচআইইএসের মাধ্যমে দরিদ্র, অতিদরিদ্র ও মাথাপিছু আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্রও উঠে আসবে। চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এ জরিপ।


আরো সংবাদ



premium cement