বিনা খরচে গার্মেন্টের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না
আমদানি নীতি আদেশ ও এনবিআর’র নির্দেশনায় গরমিল- নূরুল মোস্তফা কাজী চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
দেশে ভয়াবহ ডলার সঙ্কটের মধ্যেও ফ্রি অব কস্টে নিখরচায় তৈরী পোশাক শিল্পের কাপড়সহ আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি আমদানির সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারছেন না তৈরী পোশাক শিল্প মালিকরা। আমদানি নীতি আদেশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এ সংক্রান্ত নির্দেশনার মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খোলার ঝামেলা যেমন নেই, পাশাপাশি ব্যাংকের কোন ঝুঁকি ও ডলার ব্যয়েরও প্রশ্ন নেই।
গার্মেন্ট সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফ্রি অব কস্ট (এফওসি) ভিত্তিতে কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-২০১৫ -তে ৪ (চার) মাসের পরিবর্তে আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ এ ছয় মাসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি রিভলভিং পদ্ধতিতে আমদানি করতে পারবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ২০০৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারিকৃত এক নির্দেশনায় এ ক্ষেত্রে চার মাসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির উল্লেখ থাকায় আমদানিকৃত পণ্য চালান শুদ্ধায়নে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন গ্রুপসমূহে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়ে শুদ্ধায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমদানি নীতি আদেশের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশটি সংশোধন বা হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
গার্মেন্ট সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী ‘বিদ্যমান ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক বিগত বছরের রফতানি তথা পারফরম্যান্সের বিষয়ে ইস্যুকৃত সনদপত্রের ওপর ভিত্তি করে পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। সূত্র মতে, কোনো পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পূর্ববর্তী বছরে যদি এক লাখ গজ কাপড় আমদানি করে তৈরী পোশাক রফতানি করে, সেক্ষেত্রে বর্তমান আমদানি নীতি অনুযায়ী ছয় মাস অর্থাৎ ৫০% হিসেবে প্রাথমিক প্রাপ্যতা হবে ৫০ হাজার গজ।
রিভলভিং পদ্ধতিতে আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা নথি নং- ৩(১) অন্য রফতানি ও বন্ড/২০২১/৭০২(৮), তারিখ- ১৩/১২/২০০৩ এর (ঘ) অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রিভলভিং পদ্ধতিতে কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা তালিকার অধীনে আমদানিকৃত কাঁচামালে উৎপাদিত পোশাক রফতানি হয়েছে মর্মে লিয়েন ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে বিজিএমইএ’র কাছে দাখিল করতে হবে। ওই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে বিজিএমইএ প্রযোজ্য পরিমাণ কাঁচামাল চলতি বছরের অবশিষ্ট প্রাপ্যতার সাথে যোগ করে চূড়ান্ত অবশিষ্ট প্রাপ্যতা নির্ধারণ করে দিবে।
সূত্র উদাহরণ দিয়ে জানায়, ছয় মাসের এককালীন আমদানি প্রাপ্যতা যদি ৫০ হাজার গজ হয়; কিন্তু উল্লিখিত সময়ে আমদানি হয়েছে- ৪৬ হাজার গজ। ফলে পূর্বের প্রাপ্যতার অবশিষ্ট (৫০,০০০ - ৪৬,০০০) থাকে ৪ হাজার গজ। তা ছাড়া উল্লিখিত সময়ে আমদানিকৃত ৪৬ হাজার গজের মধ্যে যদি রফতানি হয় ৪০ হাজার গজ, সেক্ষেত্রে পূর্বের প্রাপ্যতার চার হাজার গজ ও রফতানিকৃত ৪০ হাজার গজ মিলিয়ে রিভলভিং পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রি অব কষ্টে ৪৪ হাজার গজ কাপড় আমদানি করতে পারবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণ কাপড় ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে তৈরী পোশাক রফতানি করবে, তা সংযুক্ত করে রিভলভিং পদ্ধতিতে প্রাপ্যতা নির্ধারণ করে আবার আমদানি করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আমদানি ঋণপত্র ব্যতীত বিদেশী ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক ও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে রফতানি খরচ কমানোর লক্ষ্যে ক্রেতা কর্তৃক নির্ধারিত সরবরাহকারী কর্তৃক বিনামূল্যে কাপড় ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি প্রেরণ করছে। এ ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্য চালানের মূল্য পরিশোধের দায়ভার বাংলাদেশের রফতানিকারকের থাকে না। ফলে যথাসময়ে পণ্য চালান জাহাজীকরণ ও সিএম (কার্টিং ও মেকিং চার্জ) প্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছে না, যা বর্তমান সংকটকালীন মন্দাবস্থায় রফতানি খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
সূত্র মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে আমদানি ঋণপত্র খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করায় পোশাক শিল্প মালিকগণ আমদানি ঋণপত্র ব্যতীত বিদেশী ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক ও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে রফতানি খরচ কমানোর লক্ষ্যে ক্রেতার নির্ধারিত সরবরাহকারী কর্তৃক বিনামূল্যে (ফ্রি অব কষ্ট) কাপড় ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি আমদানি করছে। এ ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্য চালানের মূল্য পরিশোধের দায়ভার বাংলাদেশের রফতানিকারকের থাকে না। ফলে যথাসময়ে পণ্য চালান জাহাজীকরণ ও সিএম (কার্টিং ও মেকিং চার্জ) প্রাপ্তিতে কোনো বিলম্ব হচ্ছে না, যা বর্তমান মন্দাবস্থায় রফতানির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
এ প্রসঙ্গে তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এফওসি পদ্ধতিতে এলসি ছাড়াই গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পাওয়া এই শিল্পের জন্য আশীর্বাদ। এতে দেশীয় কারখানার কোনো ঝুঁকি যেমনি নেই, তেমনি ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার জন্য ডলারেরও প্রয়োজন পড়ছে না। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা দ্রুত সংশোধনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা