প্রবাসী নারী শ্রমিকরা টাকা পাঠান হুন্ডিতে
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
প্রবাসী অধিকাংশ নারী শ্রমিক অবৈধ বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন। নারী শ্রমিকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে কাজ করে, সে ক্ষেত্রে তারা অর্থ প্রেরণের জন্য ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজে যেতে পারে না। ফলে হুন্ডিওয়ালারা সেই অর্থ সংগ্রহ করে অবৈধ উপায়ে দেশে পাঠিয়ে থাকে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের কপি গেল সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈধ চ্যানেলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ ও স্বল্পতম সময়ে দেশে অর্থ প্রেরণের সুযোগ থাকায় অবৈধ পথ তথা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বৈধ চ্যানেলগুলোর সেবাকে আক্ষরিক অর্থে রেমিট্যারদের দোরগোড়ায় নিতে না পারলে এবং প্রেরিত টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানো না গেলে প্রভাব কমানো কঠিন হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ এবং তা সমাধানে সুপারিশমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন প্রণয়ন উপলক্ষে মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রতিবেদনের কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈধ চ্যানেল বনাম হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে যেসব সুবিধা-অসুবিধার তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে দেশে সুবিধাভোগীদের অর্থ সংগ্রহ করতে সময় ও অর্থ ব্যয় করে ব্যাংকে যেতে হয়। অন্য দিকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে কোনো সময় ও অর্থ ব্যয় হয় না, টাকা পৌঁছে যায় দোরগোড়ায়।
ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টে এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি পাঠাতে না পারার কারণে উচ্চ আয়ের প্রবাসীরা অনেক সময় দেশে অর্থ পাঠায় না; মানিলন্ডারিং আইনের কড়াকড়ি থাকায় অনেকে নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রশ্ন এড়াতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।
এ ছাড়া দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না করেই বিদেশে গমন; ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীদের সার্ভিস চার্জ দিতে হয়; এক্সচেঞ্জ রেট কম পাওয়া যায়; প্রেরককে ইকামার কপি ও গ্রাহককে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হয়; অনেক সময় ব্যাংক কাগজপত্র চায় (কারো কারো বৈধ কাগজপত্র থাকে না) বিধায় প্রবাসী শ্রমিকরা ব্যাংকে যেতে ভয় পায়; ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে ট্যাক্স দিতে হয় বলে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা গুজব ছড়িয়ে থাকে এসব কারণে প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থপ্রাপ্তির পর দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। বাংলাদেশে শুক্র-শনিবার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে শনি-রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের কারণে সপ্তাহে মাত্র চার দিন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো যায়। অন্য দিকে হুন্ডির মাধ্যমে সপ্তাহে সাত দিনই টাকা পাঠানো যায়। এ ছাড়া কর্মস্থল থেকে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো দূরে হওয়ায় অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হন। পাশাপাশি হুন্ডির বিষয়ে শ্রমিকদের অজ্ঞতাও রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হুন্ডি ‘বিকাশ’ নামে পরিচিত।
প্রতিবেদনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকগুলো কর্তৃক অ্যাপস/ এমএফএসভিত্তিক ব্যবস্থা চালু; কর্মরত শ্রমিকদের ক্যাম্পে গিয়ে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারে সহায়তা করা; রেমিট্যান্স প্রেরণের সার্ভিস চার্জ সুবিধাভোগীদের পুনর্ভরণ করা; রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার হার বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা ইত্যাদি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা