২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা

করোনায় চাকরিচ্যুত ৩৪ শতাংশ নারী

-

কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় চাকরি হারিয়েছেন ৩৪ শতাংশ নারী। এই দুর্যোগে পরিবারের সব সদস্যদের বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে গিয়ে তারা চাকরি হারান। এসব নারী পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরি ফিরে পাননি বলে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, পুরুষের চেয়ে নারীদের চাকরি হারানোর হার বেশি। চাকরি হারানোর পর ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন ভাগের দুই ভাগ নারী তাদের চাকরি ফিরে পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ মিলনায়তনে গতকাল ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অতিমারীর আর্থসামাজিক প্রভাব এবং নীতির প্রতিক্রিয়া : ভবিষ্যতের জন্য পাঠ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য ও ইক্যুইটি গ্লোবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ পর্যালোচনা করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, কোভিডের সময় ঢাকার মতো শহরে নারী পুরুষ উভয়েই শেয়ার করে কাজ করেছেন। অন্য দিকে চাকরিও হারিয়েছেন অনেকে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের চাকরি হারানোর হার বেশি। চাকরি হারানোর পর ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন ভাগের দুই ভাগ নারী তাদের চাকরি ফিরে পেয়েছেন।
ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারীর পর বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার হঠাৎ ঊধ্বমুখী ধারায় গেছে। ২০১৯ সালে দেশে দারিদ্রতা বাড়ার হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু করোনা আসার পর ২০২০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশে। এর ফলে দরিদ্রদের ওপর প্রভাব পড়েছে বেশি। নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছেন অনেকে। বেশির ভাগের আয় কমে গেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণ ও শহরের বাসিন্দা এ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ধীরগতিতে।
কয়েকটি আঞ্চলিক জরিপে বিশ্বব্যাংক দেখেছে, শ্রমবাজারে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ কমে ৫১ শতাংশ থেকে নেমে ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনার দুই ধাপে বেকারত্ব বেড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে ঠেকেছে। বিশ^ব্যাংক বলছে, করোনার সময় দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো বেড়েছে। এ সময় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানুষ বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খেয়েছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকার মানুষ বাসস্থানের নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় এ হার বেশি ছিল। কোভিডের সময় জরুরি অর্থায়ন প্রয়োজন পড়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের জরিপে অংশ নেয়া ৪ শতাংশ দাবি করেছেন, তারা জরুরি অর্থায়নের জন্য গড়ে ২৫ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে। বিশেষ করে, এ ঋণ তারা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়েছেন। কেউ সুদে নিয়েছেন, কেউবা বিনা সুদেই নিয়েছেন। জরিপে অংশ নেয়া ৫৭ শতাংশ আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে বিনা সুদে ঋণ পেয়েছেন, ৪৮ শতাংশ সুদে নিতে হয়েছে। ৫০ শতাংশ আবার এনজিও থেকেও নিয়েছেন। ১৪ শতাংশ সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে, ১৭ শতাংশ মানুষ নিজেদের সঞ্চয় ভেঙেছেন।
করোনার সময় দেরিতে হলেও ভ্যাক্সিনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের জরিপে অংশ নেয়া ৯৪ শতাংশই ভ্যাক্সিন দেয়ার খবর জেনেছেন। ২০২১ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৭ শতাংশ মানুষ ভ্যাক্সিনের আওতায় এসেছে। তবে সবচেয়ে সফলতা এসেছে শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিনের আওতায় আনার প্রক্রিয়ায়। কমপক্ষে ১১ বছরের বেশি শিক্ষার্থীদের ৫৩ শতাংশই ভ্যাক্সিনের আওতায় এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯-এর সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ও পুনঃঅর্থায়নের কারণে আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ সময় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কার্যক্রম ও হেলথকেয়ার সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ফরেইন এক্সচেঞ্জ মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের গতিতে নজর রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। কোভিড-১৯ অতিমারী থেকে শিক্ষা নিতে বলে বিশ্বব্যাংক মন্তব্য করেছে, সরকার এখনই পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে, আর্থিক সঙ্কট ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্কট মোকাবেলায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে হবে।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল বলেন, বিশ্বব্যাংক যে উপাত্ত দিয়েছে কিছু কিছু অনেক আগের। মেডিক্যাল সাইন্সের গবেষণায় বাংলাদেশে এখন আরো অনেক অর্থায়ন দরকার।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, দারিদ্র গবেষণা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে বিআইডিএসের দীর্ঘ সময়ের পার্টনারশিপ রয়েছে। আমরা এখানে তাদের গবেষণায় দেখার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ কোডিড-১৯ সময় কিভাবে পার করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement