২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পদ্মা সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পাচ্ছে কোরিয়া ও চীনা প্রতিষ্ঠান

যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে জুনে
-

বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে। এই দুই প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)। কোম্পানি দু’টি পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণও করবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের সার্ভিস প্রোভাউডার-অপারেটর হিসেবে কেইসি-এমবিইসি জেভিকে বিবেচনার প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আগামী জুনে পদ্মা বহুমুখী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সড়ক অবকাঠামোমূলক প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর ৯৮.৫ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেইসি লিড হিসেবে কাজ করবে এবং সেতু রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দু’টির দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হবে। এর মধ্যে কেইসি সার্ভিস এরিয়া ও অ্যাপ্রোচ রোড, টোল কালেকশন ও অপারেশন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপন এবং ট্রাফিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে। অন্য দিকে এমবিইসি মেইন ব্রিজ (টোল মনিটরিং সিস্টেম ও অ্যানালাইসিস ছাড়া) ও আরটিডব্লিউ বিষয়টি দেখাশোনা করবে।

সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইসি পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজে নিযুক্ত থেকে সেতু এলাকার আবহাওয়া, নদীর অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণাসহ ভূমিকম্প নিরোধক বিয়ারিং স্থাপন, ট্রাসের সংযোগস্থল ইত্যাদি কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, যা সেতু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক হবে। তা ছাড়া এমবিইসির ৩০০টি সেতু এবং ৭০০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্য দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ তদারকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেইসির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও টোল আদায়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) ও ইলেক্টনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস) ব্যবহার ছাড়াও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম মনিটরিংয়ে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেইসি ও এমবিইসি প্রতিষ্ঠান দু’টি যৌথ উদ্যোগ গঠনের ফলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেতুর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় নিশ্চিত করা যাবে।

জানা গেছে, এর আগে পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে (কেইসি) দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি অবকাঠামো এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সেতু বিভাগ থেকে কেইসি এর সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার তথ্যাদি যাচাই করে।

এর ফলে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে জি-টু-জি ভিত্তিতে কেইসিকে সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর নিয়োগের জন্য সেতু বিভাগের প্রস্তাবটি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়।

সূত্র জানায়, কেইসি কর্তৃক দাখিল করা কারিগরি প্রস্তাবের সাথে সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক মূল্যায়নের পর সেতু বিভাগের অধীনে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ক্রয়তব্য পণ্য/সেবার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার জন্য পরে কেইসি ও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) যৌথ উদ্যোগ বা জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) চুক্তি স্বাক্ষর করে। এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের ২১ মে তারিখে সংশোধিত কারিগরি প্রস্তাব দাখিল করে।

সূত্র জানায়, টেকনিকাল কমিটি কর্তৃক কেইসি-এমবিইসি জেভি এর দাখিল করা কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন করে অপারেটর/সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কেইসি-এমবিইসি জেভি এর কারিগরি প্রস্তাব অনুমোদন এবং আর্থিক প্রস্তাব দখিলের জন্য কেইসি-এমবিইসি জেভিকে অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয়।

জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু রক্ষণাবেক্ষণে কেইসি-এমবিইসি জেভি ইতোমধ্যে আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করেছে এবং কমিটি কর্তৃক প্রস্তাব মূল্যায়ন চলমান রয়েছে। শিগগির ওই প্রস্তাবের নেগোসিয়েশন শেষ করে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তবে কেইসি এর প্রস্তাব জি-টু-জি ভিত্তিতে হওয়ায় এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০২০ সালের ১২ আগস্ট তারিখের সভায় জি-টু-জি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। ফলে প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেইসি এর পরিবর্তে কেইসি-এমবিইসি জেভিকে বিবেচনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন।
এ জন্য প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আগামী বৈঠকে অনুমোদনের উত্থাপন করা হচ্ছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement