০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ট্রেন চলছে নিয়ম মেনে বাসের অবস্থা বেহাল

-

সরকারের নির্দেশনা মেনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ট্রেন চলাচল করলেও ব্যতিক্রম অবস্থা বিরাজ করছে গণপরিবহনে। বিশেষ করে রাজধানীতে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের বাসগুলো ইচ্ছামতো যাত্রী পরিবহন করছে। মানতে চাচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
গত সপ্তাহে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে পাওয়া গেছে এমনই চিত্র। অবশ্য এসব অনিয়মের পেছনে অফিসগামী গাড়ির স্বল্পতা ছাড়াও সাধারণ মানুষের অসচেতনাও অনেকটা দায়ী বলে সড়ক পরিবহনের সাথে সম্পৃক্তরা মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৩ নম্বর টার্মিনালে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে। চট্টগ্রামের উদ্দেশে ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ৪টা ৩০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে ট্রেনের বাথরুম, যাত্রীদের চেয়ার, টেবিল থেকে শুরু করে সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পানি সরবরাহের কাজ চলছিল পুরোদমে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষ্যে স্যাভলন ভর্তি বোতল হাতে এক যুবককে দেখা গেছে বাথরুমসহ ট্রেনের বগিতে স্প্রে করতে। এরই মধ্যে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যেতে ট্রেনের নির্ধারিত (এক সিট খালি রেখে) আসনে গিয়ে বসছেন। কেউ কেউ আবার বিলম্বে স্টেশনে আসার কারণে দৌড়ে ট্রেনের আসন গ্রহণ করতে দেখা যায়। তবে ট্রেন ছাড়ার আগে কতিপয় এটেনডেন্ট আগত যাত্রীদের কাউকে কাউকে বলতে দেখা যায়, আমার কাছে এক্সট্রা টিকিট আছে। সিটে বসে যেতে চাইলে ৬০০ টাকা। আর সিট ছাড়া গেলে ৫০০ টাকা লাগবে।
এ প্রতিবেদক যাত্রী সেজে এটেনডেন্ট শফিকের কাছে টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব যাত্রী টিকিট কেটেও যান না তাদের কাছ থেকে টিকিট কিনে রেখে দিই। এই আর কি। আপনার লোক গেলে তাড়াতাড়ি তাকে আসতে বলেন। এভাবে ৪টা ৩০ মিনিট বাজার সাথে সাথে হুইসেল আর ফ্ল্যাগ উড়িয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যায়। যাত্রীদের আসনগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেকে মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ট্রেনের পরিচ্ছন্নের দায়িত্বে থাকা আবদুস সালাম নয়া দিগন্তকে বলেন, পুরো ট্রেনের যাবতীয় কাজের দায়িত্বই আমার ওপর বর্তায়। আমি ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পরই এই ট্রেনটি ছেড়ে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রেন এখন নিয়মের মধ্যে চলাচল করছে। এরমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করণীয় তার সবই করা হচ্ছে।
এর আগে স্টেশনের মূল ফটকের সামনে দেখা যায়, আগে যেখানে মোটরসাইকেল রাখা হতো সেখান থেকে সেগুলো সরিয়ে বাইরে রাখা হয়েছে। স্টেশনের সামনে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে মেশিন। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীই স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছে না। গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। এত দিন অনলাইনে টিকিট কেটে যাত্রীদের গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এর সাথে ৮ জুন থেকে সকাল ৮টা থেকে ইস্যুকৃত ট্রেনের টিকিটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টার থেকে দেয়া শুরু হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল করলেও ঢাকা শহরে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে বাস, মিনিবাস, লেগুনাসহ অন্যান্য গণপরিবহনে।
এ দিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাইনবোর্ড ওয়ান রেস্টুরেন্টের উল্টো পাশের ওভারব্রিজের নিচে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ যাত্রীরা অপেক্ষা করলেও এই স্টপেজে কোনো বাসই দাঁড়াচ্ছিল না। এ সময় দেখা গেছে প্রতিটি বাসেই স্বাস্থ্যবিধিকে তোয়াক্কা না করে (মাস্ক নেই) ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তুলে গন্তব্যে যেতে। সময় বাড়ার সাথে সাথে এ সময় অফিসগামীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে দেখা যায়। উপায় না পেয়ে অনেককে মিনি ট্রাকে উঠে গন্তব্যে চলে যেতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকার এক সিট বাদ দিয়ে এক সিটে যাত্রী উঠানোর নিয়ম করলেও সেই নিয়ম বাসচালক ও হেলপাররা মানছেন না। তারা বাসের দুই সিটেই (বেশির ভাগ সময়) যাত্রী তোলেন, এমনকি দাঁড় করিয়েও যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। যাত্রীদের চিল্লাচিল্লিকে তারা তোয়াক্কা করছেন না। এর মধ্যে বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই আবার মাস্ক থাকছে না। হেলপারের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেটি থুতনির নিচে পড়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ, সাইনবোর্ড হয়ে যেসব গাড়ি সাভার, ধামরাই রুটে চলাচল করছে এম মধ্যে মৌমিতা, ঠিকানা, হিমাচল পরিবহনে অনিয়ম বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। একইভাবে ভিক্টর পরিবহন, বলাকা, রজনীগন্ধ্যা, অনাবিলসহ অনেক পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বাসের সুপারভাইজাররা যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার সময় সরকার নির্ধারিত ৬০ ভাগ বেশি ভাড়াই আদায় করছেন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে অবশ্য চালকরা দাবি করে বলছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী তুলছেন। তবে সকাল-বিকেল অফিসগামী ও বাসায় ফেরা যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ার কারণে অনেককে জোর করেই গাড়িতে উঠে পড়ছেন। সে ক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আমরা যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে বাধা দিচ্ছি না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যদি সম্ভব হয় তাহলে বাসে কেন সেটি সম্ভব হবে না। দেশের স্বার্থে এবং করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে হলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement