২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
এসডিজি আলোচনায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য

সময় এসেছে যুব ও বেকারসহ বিভিন্ন ভাতা প্রচলনের

-

আগামী বাজেটে যুবদের জন্য যুবভাতা প্রচলনের সময় এসেছে। প্রতীকী অর্থে হলেও বেকার ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা প্রচলন করলে সরকার যে যুবদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে, সেটা বলা যাবে বলে মনে করছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুবদের সংখ্যা বাড়ালেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে তাদের অংশগ্রহণ এখনো সেভাবে বাড়ানো যায়নি।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা : স্থানীয় প্রেক্ষিত ও যুবসমাজ’ শীর্ষক গতকাল এক ভার্চুয়াল সংলাপে ড. দেবপ্রিয় এ কথা বলেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক নাজীবা আলতাফ। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির (সংলাপ এবং প্রচার) যুগ্ম-পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশে যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে, তবে গুণগতভাবে যুবদের কণ্ঠস্বর বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তিনি শিক্ষিত বেকারদের জন্য বিশেষ অ্যাপ তৈরি করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, যে তরুণেরা চাকরি খুঁজছেন, তারা অ্যাপে নিবন্ধন করবেন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাহিদার কথাও জানাবেন। হিসাবে না থাকলে বিবেচনাতেও আনার সুযোগ কমে যাবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের যুবদের পরিস্থিতি নাজুক থেকে নাজুকতর হয়েছে। গত প্রায় দেড় থেকে দুই বছরে যুবরা কর্মস্থলে ঢুকতে পারেনি। বেকারত্ব বেড়েছে। দেশের দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। দেশের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে প্রবেশ করেছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এর মধ্যে কত শতাংশ যুব প্রতিনিধি থাকবেন, তা অনুমান করা যায়।
তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকার প্রসঙ্গে প্রচলিত কথা হচ্ছে, পড়াশোনা করে যে, বেকার তত থাকে সে। সব মিলিয়ে যুবদের উন্নয়নে এবং জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ বা এসডিজি বাস্তবায়নে নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম খান জানান, অধিদফতরের সার্বিক কার্যক্রমকে ই-সার্ভিসের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শুধু কতজন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তা তুলে ধরা হয়। তবে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর কতজন আসলেই চাকরি পেলেন, তার আর কোনো হিসাব জানা যায় না। এই তথ্য জানা জরুরি।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণের পর তার ফলাফল জানা যাচ্ছে না। এটাই একটা বড় গ্যাপ। এনজিওকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, সরকার ও এনজিওর মধ্যেও গ্যাপ আছে। এটা দূর করতে পারলে অনেক কাজই খুব সহজে করে ফেলা সম্ভব। তিনি ভাসানচরকে এনজিও-সরকারের কাজের সফল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকারি পর্যায়ে রিপোর্টিং বা প্রতিবেদন প্রণয়নে দুর্বলতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি সংগঠন যুবদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসডিজি বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজে লাগাচ্ছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের স্থানীয় পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, এসডিজি বিষয়টি যখন শুরু হয়, তখন করোনার বিষয়টি ছিল না। বর্তমানে এসডিজি বাস্তবায়নে করোনার বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। করোনা শুরুর পর থেকে যুবদের অবস্থা জটিল হয়েছে। তিনি বলেন, এসডিজির মূল বিষয় হলো কেউ পিছিয়ে থাকবে না। উন্নয়নের প্রতিটি পর্যায়ে যুবদের অংশগ্রহণ, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দরকার। একইভাবে যুব নারীরা যাতে চোখের আড়ালে থেকে না যান, সে বিষয়েও তিনি সবাইকে নজর রাখার আহ্বান জানান।
নাজীবা আলতাফ বলেন, শুধু কর্মভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যুবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং যুবদের অধিকার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উদ্যোগ নেয়া উচিত। শুধুমাত্র পরোক্ষভাবে পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া নয়, যুবদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট এসডিজি সম্পর্কিত এবং যুবভিত্তিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement