সাইদুর রহমান বয়াতি এক জীবন্ত কিংবদন্তি
- আবদুর রাজ্জাক ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:১৮
যার গান শুনে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী আবেগাপ্লুত হয়ে দোয়া করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে দিয়েছিলেন একটি কেমি ঘড়ি উপহার। সেই খ্যাতিমান শিল্পী ও গীতিকার সাইদুর রহমান বয়াতি। দেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যরীতির বিভিন্ন আঙ্গিকের অন্যতম পালাকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। এগুলো ছাপিয়ে তার অন্যতম পরিচয় তিনি একজন মরমি সাধক। ৮৮ বছর বয়সেও তার চোখে মুখে এক উজ্জ্বল দ্যুতি, কণ্ঠে তারুণ্যের ছাপ। জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, মারফতি, কবিগান, রাখালিয়া, গাজির গানসহ প্রায় ৫০ রকমের গান জানেন তিনি। লিখেছেন দুই হাজারের বেশি গান। সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ একাধিক সম্মাননা লাভ করেছেন। তাই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাংলার আদি সুর অনুরাগী এবং গবেষকদের কাছে তিনি এখন একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। সম্প্রতি এই উজ্জ্বল নক্ষত্র সাইদুর রহমান বয়াতির জীবন দর্শন, সাধনা, সঙ্গীত জীবন, বর্তমান বাউল গান প্রভৃতি বিষয় জানতে মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউনিয়নের হাসলি গ্রামে তার মুখোমুখি হয়েছিল নয়া দিগন্তের সংবাদদাতা আবদুর রাজ্জাক।
ব্যক্তিজীবন ও পেশা : ১৯৩১ সালে মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউনিয়নের হাসলি গ্রামে জন্ম সাঈদুর রহমান বয়াতির। বাবা জিগির আলীও ছিলেন গানপাগল মানুষ। বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই দোতরা বাজিয়ে গান গাইতেন। কবে যে নামের পেছনে বয়াতি বিশেষণটি যোগ হয়েছে, তা তিনি নিজেও জানেন না। ৮৮ বছর বয়সে আজো কর্মঠ। ১৫ বছর বয়স থেকে গান লেখা শুরু। এর পর থেকে তিনি নতুন নতুন গান, সুর, সবই করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। মা কুসুমী বেগম ছেলের গানে মুগ্ধ হয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে গণিতে ফেল করার পর আর পরীক্ষা দেননি সাইদুর রহমান বয়াতি। এই কবি গায়কের নেশা ও পেশা মিলেমিশে একাকার। গানের আনন্দ ভুবনের মধ্যে থেকেই তিনি জীবিকার সন্ধান করেছেন। গান গেয়ে যে সামান্য অর্থ পেয়েছেন, তাই দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন ঘোস্তা গ্রামের জমশের আলীর মেয়ে সালেহা বেগমকে। এই ঘরে আলো করে জন্ম নিয়েছে তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আবুল বাশার আব্বাসীও বাবার মতো সঙ্গীত ভুবনে জড়িয়ে রেডিও, টিভির নিয়মিত শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভালো মানসিকতার পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। বাবার আদর্শ আর মায়ের দোয়ায় তিনিও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক, লোকজ ও আধ্যাত্মিক ভাবধারায় নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাইদুর রহমান নৌবাহিনীতেও যোগ দেন কিন্তু মায়ের অনুমতি না থাকায় পরে মানিকগঞ্জের কো-অপারেটিভ ব্যাংকে যোগ দেন। ব্যাংকের হিসাবের খাতায় গান লেখাসহ ছোটখাটো খেয়ালের ভুলে তার আর চাকরি করা হয়নি। এরপর জীবন চালিয়েছেন গান গেয়ে ও ৮০ টাকার সঞ্চয় দিয়ে মুদি দোকান করে। বিভিন্ন সময়ে গানের দল গঠন করেছেন। মতের মিল না হলে দল ভেঙেছেন। আবার দল গঠন করেছেন। এখনো একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। রেডিও ও টেলিভিশনেও তার গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। লোকসঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি ব্যস্ত দেশের লোক সংস্কৃতির নানা বিষয় সংগ্রহ, লোকসংস্কৃতি, লোকসঙ্গীত, বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার, রেডিও-টিভির টকশো সেমিনারেও আলোচক হিসেবে। আধ্যাত্ম সাধনার পাশাপাশি পড়ছেনও প্রচুর। তিনি লোকসঙ্গীতে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপও পেয়েছেন।
গানের আসর থেকে স্কুলে : গানপাগল এ মানুষটি কিভাবে শিক্ষাদীক্ষার সংস্পর্শে এলেন, তা জানালেন তিনি- তখনকার দিনে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বৃষ্টির আশায় মানিকগঞ্জে মেয়েদের কণ্ঠে সারিগান গাওয়ার প্রচলন ছিল। একবার পরিবারের সবাই মিলে বৃষ্টির প্রত্যাশায় গান করছিলাম। সেই দলে আমার মা, চাচী, প্রতিবেশী অনেকেই ছিলেন। আমি বুক চাপড়িয়ে সারিগান করছিলাম। গান গাওয়ার একপর্যায়ে আচমকা একজন আমাকে কান ধরে টেনে তুললেন। তাকিয়ে দেখি তিনি আমার ভগ্নিপতি ইয়াসিন আলী। পশ্চিম হাসলি স্কুলের মাস্টার। তিনি আমাকে স্কুলে নিয়ে ভর্তি করে দিলেন। ১৪-১৫ বছরের সময় ইয়াসিন মাস্টার জোর করে ভর্তি করেন মানিকগঞ্জের পশ্চিম হাসলি ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ক’জন প্রতিবেশীর সাথে হেঁটে ১৯৫১ সালে জিন্নাহ সাহেবকে দেখতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জিন্নাহকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। তখন তিনি একটি গান লিখে ছিলেন ‘আমার ভাষায় বলব কথা। তোদের কেন মাথাব্যথা এ ভাষাতে জুড়ায় প্রাণ, তোদের কী তাতে যায়রে মান’ এটিই তার প্রথম লেখা গান। সেই থেকে গান লেখা ও নিজের গানে সুর দেয়া অবিরাম যাত্রা। প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হলাম নবগ্রাম হাইস্কুলে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমি লজিং থাকতাম নবগ্রামের জহির বয়াতির বাড়িতে। জহির বয়াতি একজন গুরুশিল্পী। আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তার কাছে গানের পাশাপাশি সারিন্দা, দোতরা, বায়া, খঞ্জনি বাজাতে শিখেছিলাম। প্রতিদিন তালিম নিতাম। এর মধ্যে দেশে ভাষা আন্দোলন শুরু হলো।
সঙ্গীত ও যাত্রা জগতে : স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি ‘বাসুদেব অপেরা’ দলে যোগ দেন। সদ্য তরুণ বয়সে তিনি যাত্রা দলে নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতেন। সে সময় নারী চরিত্রে রূপদানে দর্শকের বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়ার প্রত্যাশায় ‘ছবি রানী’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলের কারণে পেছন থেকে দেখে সবারই মনে হয়েছে, সাইদুর রহমান বয়াতি ছেলে নয়, তিনি একজন মেয়ে। যাত্রাশিল্পের একসময়ের আলোচিত নায়িকা ছবি রানীই হচ্ছেন আজকের সাইদুর রহমান বয়াতি। আধ্যাত্মিক গানের ধারায় জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বাউল, মারফতি, নবীতত্ত্ব, কবিগান, মুর্শিদি, গাজীর গান, মালসি, সখী সম্পাত, দমতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব এমন প্রায় ৫০ পদের গান গেয়ে সজীব করেছেন বাঙালির প্রাণ। অন্য দিকে ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারায় মীর মশাররফ হোসেন রচিত বিষাদসিন্ধু অবলম্বনে ইমাম যাত্রাদল পাণ্ডুলিপি রচনা, নির্দেশনাই শুধু নয়, অভিনয়েও সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।
ভাষা আন্দোলনে যুক্ত : ‘আমার ভাষায় বলব কথা/তোদের কেন মাথা ব্যাথা/এই ভাষাতে জুড়ায় প্রাণ/তোদের কি তাতে যায়রে মান।’ ১৯৫২ সাল, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার কথা বলার অধিকার নিয়ে সারা বাংলায় মানুষ তখন টগবগ করে ফুটছে। মানিকগঞ্জে নিভৃত পল্লীর এক কিশোর সাইদুর রহমানের মনেও তা আন্দোলিত হয়। তারই প্রকাশ ঘটিয়ে এই গান লেখা। এই গান তিনি বিভিন্ন আসরে, বাজারে গেয়ে বেড়াতেন। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখনো আমি গান গেয়েছি। মানুষকে ন্যায্য আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছি। ভাষা সংগ্রামী রফিক শহীদ হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে একটি গান রচনা করি। গানটির কথা ছিল, ‘মারিস না মারিস না ওরে, মারিস না বাঙ্গাল/এ দেশ ছেড়ে পালাবি তোরা, পালাবে না এই বাঙ্গাল।’
শেরেবাংলা, ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুকে গান শুনিয়েছেন : ১৯৫৪ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের এক জনসভায় তাকে গান গেয়ে শুনিয়েছি। একবার মানিকগঞ্জের এক জনসভায় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর উপস্থিতিতেও গান গাওয়ার সুযোগ হয়। মওলানা সাহেব আবেগাপ্লুত হয়ে আমার জন্য দোয়া করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে ভোটের গান গেয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে দরবার হলে এক সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বাংলার দুধের সর, সে বিনে বাঁচে না এই বাংলার প্রাণ’ এই গান গেয়ে শুনান। এই গান শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে একটি কেমি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন।
রেডিওতে গাইতে শুরু : স্বাধীনতার বেশ আগে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সাথে আমার পরিচয় হয়। বড়ই দিলখোলা মানুষ তিনি। উচ্চশিক্ষিত। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার। মানুষটা শিল্পীদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি আমার গান শুনে খুব পছন্দ করলেন। একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন নাজিমউদ্দিন রোডে, রেডিও সেন্টারে। আমার গান গাওয়ার ব্যবস্থা হলো। তখন থেকে নিয়মিত রেডিওতে গান করছি। সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান আমার রচিত গানের একটি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার ছেলেকে নিয়ে একদিন টেলিভিশন সেন্টারে গেলাম। সে শিশুশিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে গান গাইবে। কিন্তু তারা আমাকেও গান গাইতে বললেন। এরপর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় ‘ভরা নদীর বাঁকে’ ও ‘হিজল তমাল’ অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করেছি।
চলচ্চিত্রে অভিনয় : আমি গানপাগল মানুষ। আজীবন গান আমার রক্তে মিশে আছে। গান গাইতে গাইতে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘লালসালু’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘লালন’, ‘লিলিপুটেরা বড় হবে’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ‘নদীর নাম মধুমতি’তে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আসলে শিল্পীদের কোনো নির্দিষ্ট পেশা হয় না। তারা তো অন্য জগতের মানুষ। জগতের মোহ তাদের স্পর্শ করে না। গুণী এই বাউল সাধক ২০১২ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পদক।
বিখ্যাতদের সংস্পর্শ : সৃষ্টিকর্তার কৃপায় একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে অনেক মহৎ মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। আসাম, কলকাতায় গিয়ে ‘কমলা সুন্দরী’ যাত্রাপালায় অভিনয় করেছি। বাবার পাশাপাশি জহির বয়াতি, রাধাবল্লভ সরকার ও মানিক বয়াতির কাছ থেকে তালিম পেয়েছি। গুরুর আশীর্বাদে ৫০ রকমের গানের পরিবেশনা আয়ত্ত করেছি। দেশের মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি। বিখ্যাত ফোকলোরবিদ অধ্যাপক হেনরি গ্লাসি, লাউরো হংকো, সাইমন ড্রিং, জওহরলাল হাণ্ডুসহ অনেক বিখ্যাত লোকের সাক্ষাৎ লাভ করেছি। তারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আমার ওপর বই লিখেছেন। এক জীবনে আর কিছু চাই না।
অপসংস্কৃতি এ দেশের কৃষ্টি, সাংস্কৃতিক মূল ধারাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জীবনের স্বাভাবিক গতি-ছন্দ আর নেই। এর জন্য তিনি দায়ী করেন রাজনীতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে। যে কারণে মানুষ এখন স্বার্থপর। নিজেকে ছাড়া কাউকে চিনে না। তাদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমি যোগ পূরণের লাভ বুঝি না, ভাগ বিয়োগেই ধন্য, জীবন খাতায় অঙ্ক কষে ফল পেয়েছি শূন্য’ শেষ বয়সে এসে এই আত্মোপলব্ধি থেকে তিনি সবার কাছে আবেদন রেখেছেন, অর্থবিত্তের মায়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টায় শ্রেয়। লোকসঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি ব্যস্ত দেশের লোকসংস্কৃতির নানা বিষয় সংগ্রহ, লোকসংস্কৃতি, লোকসঙ্গীত ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার, রেডিও-টিভির টকশো সেমিনারেও আলোচক হিসেবে। বর্তমানে তিনি লোকসঙ্গীতে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপও পেয়েছেন।