২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সিপিডির সংলাপে অভিমত

তৈরী পোশাক খাতের সঙ্কট স্থায়ী হতে পারে আগামী বছর পর্যন্ত

-

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পোশাক খাতের উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের ধস নেমেছে। এর ফলে পোশাক শিল্পে ক্রয়াদেশ ও মূল্য নির্ধারণী চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়ে আগামী বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ তৈরী পোশাক কারখানা সঙ্কটে পড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ক্রেতারা এখন অর্ডার ও পণ্যের দর আরো কমিয়ে দিয়েছে।
গতকাল ‘কোভিড-১৯ সঙ্কট থেকে তৈরী পোশাক খাত পুনরুদ্ধার : পণ্য মূল্য নির্ধারণী চেইনের মাধ্যমে কি সমাধান সম্ভব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে সিপিডি। বেসরকারি সংস্থা ‘সাউদার্ন ভয়েস’ এবং শ্রীলঙ্কার ‘পলিসি স্টাডিজ ইনস্টিটিউট’ (আইপিএস) যৌথভাবে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে। সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের এ ধরনের গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট মোকাবেলার অভিজ্ঞতা নেই। এমতাবস্থায় পোশাক খাতে করোনার দ্বিতীয় টেউ মোকাবেলায় মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। একই সাথে পোশাক খাতের সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, শ্রমিক ও ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জে বিশ্ববাজারে পোশাকের মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতার একটি কাঠামো গড়ে তোলা দরকার।
আন্তর্জাতিক স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে অন্তত এক বছর মেয়াদে সহযোগিতার একটি কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে সিপিডি বলেছে, পোশাকের মূল্য চেইন স্তর ও জাতীয়পর্যায়ের পদক্ষেপের সমন্বয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাবের সুযোগ থাকা দরকার। মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জের কৌশল, অ্যাপ্রোচ ও উপকরণ হবে উদ্ভাবনীমূলক, কার্যকর ও সময়াবদ্ধ। বিদ্যমান পদক্ষেপে মধ্যমেয়াদি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধারে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সিপিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত ও টেকসই পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতার কারণে পোশাক খাতে কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত বছর এপ্রিল-মে মাসে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছিল। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাকের আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশ। তবে গত জুনের পর ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগমনী বার্তায় ক্রেতাদের মধ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নে বড় উদ্যোক্তাদের অটোমেশনে যাওয়া ও ভবিষ্যতে পণ্যের বৈচিত্র্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশী সরবরাহকারীরা অনলাইনে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমিত এক্সপোজার রেখেছেন। অনলাইনে বিক্রয়ের পরিমাণ খুব কম হলেও পণ্যের দাম ঐতিহ্যবাহী স্টোরে বিক্রয়ের তুলনায় ভালো।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি পণ্য পোশাক খাতকে রক্ষায় বিদেশী ক্রেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে এই সঙ্কটকালে নতুন বাজার খুঁজতে হবে দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সঙ্কট সামাল দিলেও এখন মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউয়ে সঙ্কট আরো গভীরে পৌঁছেছে। এর ফলে ক্রেতারা এখন অর্ডারের পরিমাণ ও মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। এতে সঙ্কট আরো বাড়ছে।
ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রেতারা যদি পোশাকের অর্ডার ঠিক রাখার পাশাপাশি মূল্যও কিছুটা বাড়িয়ে দেন, তাহলে এ খাতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আমাদের নতুন নতুন বাজারে ঢুকতে হবে। যদি আমরা ঠিকমতো নতুন বাজারে ঢুকতে পারি, তাহলে হয়তো সঙ্কট কিছুটা কমতে পারে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা দামি পোশাক রফতানি করে জানিয়ে সিপিডি’র গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ কারখানা সঙ্কটে রয়েছে, যেখানে শ্রীলঙ্কায় এই হার ৩১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়ে আগামী বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, শ্রমিক ও ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডি’র চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান উপস্থিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম-এর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের কাছে ক্রেতা হিসেবে তার কোম্পানি কোনো দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী কি না জানতে চান।
এ সময় জিয়াউর বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান এই সঙ্কট দূর করতে প্রতিশ্রুত। যদি সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, ক্রেতা ও শ্রমিক নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই এইচঅ্যান্ডএম পোশাকের মূল্য কিছুটা বাড়াতে রাজি আছে।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, প্রথম সঙ্কট থেকে আমরা কিছুটা উত্তরণ করতে পারলেও এখন দ্বিতীয় সঙ্কটে পড়েছি। এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ফারভেইজ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর পোশাকের জোগান দিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, কোনো সরকার কোনো কোম্পানিকে সরাসরি নির্দেশনা দিতে না পারলেও নেদারল্যান্ডস সরকার সে দেশের পোশাক আমদানিকারকদের বাংলাদেশের অর্ডার বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement