জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, ত্রাণ দেয়া হোক বিপর্যস্ততার হারে
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
এলাকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া উচিত বিপর্যস্ততার অনুপাতে। দুর্যোগপ্রবণ চর এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে যে ত্রাণ ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার বলে তৃণমূল পর্যায়ের ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সে জন্য বিশদ ডাটাবেজ তৈরিসহ ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কিত অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। একই সাথে ত্রাণসহ অন্যান্য সরকারি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার পরিবর্তে সামগ্রিক বিপন্নতা মূল মাপকাঠি হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে।
করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা : সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা শীর্ষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ভার্চুয়াল সংলাপে মাঠ পর্যায় থেকে এসব বক্তব্য উঠে আসে। সিপিডি ও অক্সফার্ম ইন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ শীর্ষক চলমান প্রকল্পের আওতায় এ সংলাপটি আয়োজিত হয়। সহযোগী আয়োজক ছিল মানব মুক্তি সংস্থা, সিরাজগঞ্জ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সংস্থার সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মুনতাসির কামাল মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সংলাপে কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, পেশাজীবি এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ সিরাজগঞ্জ জেলার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রণোদনার সহায়তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ সেবা সম্পর্কিত ‘হটলাইন’ নাম্বারসহ (যেমন : ৩৩৩) প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন অভিনব যে উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে সে সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা এখনো যথেষ্ট সচেতন নন। সুবিধাভোগী নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। সামগ্রিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং উপজেলা/ইউনিয়নভিত্তিক বরাদ্দের বিভাজনের মধ্যে অধিকতর সমন্বয়ের জায়গা আছে। সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বিশদ ডাটাবেজের অভাব সরকারি পর্যায় থেকে বারংবার উল্লিখিত হয়েছে। সঠিক চাহিদা নিরূপণ এবং সে অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যের হার, জনঘনত্বের হার, বেকারত্বের হার ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক সূচকসমৃদ্ধ একটি বিশদ ডাটাবেজ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
সিরাজগঞ্জের মাঠ পর্যায়ের সাধারণ মানুষ বলছেন, ত্রাণ সহায়তার অপ্রতুলতা এবং সময়মাফিক ত্রাণ বিতরণ করার বিষয়গুলো উঠে আসে। তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ এলাকায় দুর্বল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার দরুন সেখানকার স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন সরকারি হটলাইন পরিষেবার যথাযথ সুফল লাভ করতে পারেনি।
অধ্যাপক ডা: হাবিবে মিল্লাত এমপি ত্রাণ ও প্রণোদনা সরবরাহে অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে বলেন, অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছিল সে ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি ত্রাণ সরবরাহে সংসদ সদস্যদেরকে আরো প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে মত দেন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোকে আরো ভালোভাবে মোকাবেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, করোনা মোকাবেলায় ও ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে কাজ করেছে, যদিও কিছু অপ্রতুলতা রয়েছে। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চল যেহেতু একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা, প্রণোদনা বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন। কৃষিকার্ড হালনাগাদ করা এবং তা ডিজিটাল করার ওপরে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।