অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে অর্থ পাচার বন্ধ করা জরুরি
- ২৫ জুন ২০২০, ০০:০০
দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করা, আর এর জন্য ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা না বাড়িয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের বাইরে অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ।
গতকাল সুশীল সমাজ, শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবডি আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে অবৈধ অর্থ পাচার রোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দেশে অবৈধ অর্থ পাচার, কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং ঋণখেলাপি বৃদ্ধির প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী, এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের আহসানুল করিম। অন্যান্যের মধ্যে এতে বক্তব্য রাখেনÑ ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক ও ফেরদৌস আরা রুমী, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, কেয়ার বাংলাদেশের আমানুর রহমান এবং সিএসআরএলর প্রদীপ কুমার রায়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে মো: আহসানুল করিম বলেন, সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছে, তাতে ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আর এই ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে কর আদায়, বিশেষত ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর এবং ব্যাংক ঋণের উপর। অথচ সরকার অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করাটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-মার্ক ২০২০ এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল সময়কালে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি, ঘুষ, অবৈধ বাণিজ্যিক লেনদেন এবং কর ফাঁকি দিয়ে মোট চার লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। গড়ে প্রতি বছর পাচারের পরিমাণ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের দুই গুণ বা স্বাস্থ্য খাতের জন্য দুই বছরের বাজেটেরও বেশি। এই অর্থ পাচার রোধ করা গেলে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত রাজস্ব হিসেবে সরকার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারত। মূল প্রবন্ধ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হচ্ছেÑ দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, কালো টাকা উপার্জন এবং অবৈধ অর্থ পাচার রোধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সাথে আন্তঃসরকার চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। যেমন সুইজারল্যান্ডের সাথে চুক্তি, যাতে সে দেশের ব্যাংকে বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশে থাকা বিদেশীরা কী পরিমাণ অর্থ সে দেশে পাচার করেছে, সে তথ্য সরকার পেতে পারে এবং পাচার হওয়া অর্থ সরকার ফিরিয়ে আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নেয়া পদক্ষেপ, যেমন ডিমোনিটাইজেশন বা অবৈধ অর্থ বাজেয়াপ্ত করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। অর্থ লুট ও অর্থ পাচার এবং পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি আর অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধে সরকারের উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়ছে না। সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রকৌশলীসহ রাষ্ট্রের সব খাতেই পুঁজিবাদের একটি দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞপ্তি।