হোটেল-রিসোর্ট খুলতে চান ব্যবসায়ীরা
শুধু ঈদে লোকসান ৫০০ কোটি টাকা- আবুল কালাম
- ৩১ মে ২০২০, ০০:০০
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার হোটেল-রিসোর্ট খুলতে চান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, প্রায় আড়াই মাস ধরে লকডাউনের কবলে পড়েছে পর্যটন শিল্প। এতে বেকার হয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্প ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রিসোর্ট খোলার পক্ষে মালিকরা।
রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে করোনাভাইরাসের সময়ে ব্যবসা চলবে তার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেই তারা ব্যবসা চালু করবেন।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বলছে, শুধু রমজান ও ঈদ মৌসুমে হোটেল ট্যুরিজম খাত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে। আর ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, অ্যাভিয়েশন খাত ছাড়া শুধু হোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটনের বিভিন্ন ব্যবসায় এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছেন লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সীমিত পরিসরে হলেও হোটেল-রিসোর্টগুলো খুলে দেয়া দরকার বলে তারা মনে করেন। তারা জানান, ৪৪টি তারকা হোটেলসহ দেশের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল অতিথি শূন্য রয়েছে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোটেল খাত। এমন পরিস্থিতিতে তারকা হোটেলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চলতি বছরের মে পর্যন্ত তিন মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির ধারণা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে ধস নেমেছে দেশের হোটেল ব্যবসায়। নতুন করে বুকিং দিচ্ছে না কেউ। আগের বুকিং আদেশও বাতিল হয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অস্তিত্ব বাঁচাতে কর মওকুফ ও আর্থিক প্রণোদনা চান খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ জানান, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা হবে না। তার মানে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অবস্থার মধ্যেই চলতে হবে। তাই এ বছরটায় পর্যটন শিল্প ও এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে কোনো রকমে টিকে থাকতে হবে। ব্যবসা হবে ২০২১ সালে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে একাধিক বৈঠক করে তারা কিছু প্রস্তাবনা দিচ্ছেন; যাতে সফট লোন বা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহযোগিতা পান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। ২০০০ সালে সার্স ভাইরাসে পর্যটনে যে ক্ষতি হয়েছিল এবার করোনাতে তার ১০ গুণ বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিআইএইচএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশী অতিথিদের বেশির ভাগই আসেন চীন, জাপান, ভারত, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কা থেকে। সাধারণত বছরের এ সময়ে ৭০ শতাংশের বেশি রুমে অতিথি থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
বিআইএইচএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত পূর্বানুমান হিসাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলো এবং অন্যান্য ৫০০টি হোটেল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
বিআইএইচএর প্রেসিডেন্ট এইচ এম হাকিম বলেন, করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোটেলগুলো পড়েছে চরম সঙ্কটে। কোনো কোনো হোটেলের অকোপেন্সির হার ১ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ। এরূপ অবস্থা বহাল থাকলে হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ইউনিক গ্রুপের সিইও শাখাওয়াত জানান, তাদের ৯৯ ভাগ হোটেলের অতিথি বিদেশী। গেল দুই মাসে কোনো বিদেশী পর্যটক আসেননি। সর্বশেষ তিন থেকে চারজন তাদের হোটেলে ছিলেন, যারা লকডাউনের কারণে আটকে ছিলেন। তারাও চলে যাবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আটকে আছে। গুলশানে নতুন চালু হওয়া আরেকটি হোটেল লকডাউন অবস্থায় রয়েছে।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বিআইএইচএ বলছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর শ্রমিক ও কর্মচারীদের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মচারীকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়া হোটেলগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানির বিল ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর আয়কর মওকুফ করা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি থেকেই হোটেল খাতে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে বিদেশী অতিথি কমতে থাকে হোটেলগুলোতে। আর গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুরোপুরি অতিথি শূন্য হয় হোটেলগুলো। গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন চলছে। এর শেষ কবে, তা-ও বলতে পারছে না কেউ। ফলে অনিশ্চয়তায় মধ্যে দিন কাটছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের।
আবুল কালাম