বাপেক্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে চায় সকার
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:২০
তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে আজারবাইজানের তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি ‘সকার একিউএস ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসি’। তিনটি কূপ খনন কাজের জন্য চুক্তি করে একটি খননের পর সহায়তা না করার অভিযোগ এনেছে কোম্পানিটি। পাশাপাশি চুক্তি বাতিল করে ক্ষতিপূরণ ও বকেয়া বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকাও দাবি করেছে সকার। যদিও বাপেক্স বলছে, সকারেরও অনেক ত্রুটি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে গত ১৬ ডিসেম্বর দেয়া এক চিঠিতে তাদের বিরোধ মীমাংসা করে যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করার আহ্বান জানায় সকার। চিঠিতে তারা জানায়, বাপেক্সের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও বিরোধ মীমাংসা করা যায়নি। ফলে বাংলাদেশ বিরোধ মীমাংসা না করলে তারা আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাবে। বাংলা ট্রিবিউন।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আজারবাইজান সফরের সময় এ বিষয়ে সে দেশের জ্বালানি মন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেছেন বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার জন্য। আমি এসে কথা বলেছি। যেটা দেখা যাচ্ছে, দায় দুই পক্ষেরই আছে। আশা করছি এ বিষয়ে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবে উভয় পক্ষ।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আজ রোববার এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ বৈঠকে বসছে। সেখানে বাপেক্স ও সকারের বিরোধ নিয়ে আলোচনা হবে। সকারের পক্ষ থেকে চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজারবাইজান সফরের সময় দেশটির পক্ষ থেকে সকারের বিষয়টি সমাধানের জন্য তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এরপর আজারবাইজানের জ্বালানিমন্ত্রী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে বৈঠকও করেন।
বাপেক্স সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ-১এই তিনটি গ্যাসকূপ খননের জন্য চুক্তি করে আজারবাইজানের সকারের সাথে বাপেক্স।
চুক্তির পর কাজ শুরু করে ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১ গ্যাসকূপ খনন শেষে কোনো গ্যাস পায়নি সকার। কিন্তু বাপেক্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। সমস্যা শুরু হয় দুই নম্বর কূপ খনন কাজ শুরু করার সময়। সেমুতাং থেকে বেগমগঞ্জ-৪-এর রিগ ও মালামাল নিয়ে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেয় সকার। কিন্তু বাপেক্সকে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও তারা বিলে অনুমোদন দেয়নি। একপর্যায়ে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স। সকার সবকিছু মেনেও নেয়। চুক্তি বাতিল করলে সকারকে যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা তা দিতে চাচ্ছে না বাপেক্স। আর এ নিয়েই বিরোধে জড়িয়েছে দুই পক্ষ।
উপদেষ্টাকে দেয়া চিঠিতে বলা হচ্ছে, চুক্তি বাতিল করে ক্ষতিপূরণ আর বকেয়া বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা দিতে হবে সকারকে। এর মধ্যে তাদের পারফরম্যান্স গ্যারান্টিও রয়েছে, যা বাপেক্সের কাছে জমা আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশী অন্য কোম্পানিগুলো যেখানে প্রতিটি কূপ খননে এক কোটি ৬০ লাখ থেকে এক কোটি ৮০ লাখ ডলার নেয়, সেখানে সকারের সাথে এক কোটি ১০ লাখ ডলার করে তিনটি কূপ খননে তিন কোটি ৩০ লাখ ডলারের চুক্তি করা হয়। সকারকে দিয়ে কম খরচে কূপ খনন করা সম্ভব হতো। কিন্তু তাদের কাজ করতে না দিয়ে অন্য বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে বাড়তি দরে কূপ খনন করবে সরকার। অভিযোগও আছে, যেসব কোম্পানি বেশি ব্যয়ে কূপ খনন করছে, তাদের প্রভাবেই সকারকে বাংলাদেশ ছাড়তে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সব দায় বাপেক্সের, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। সকারেরও কিছু ত্রুটি রয়েছে।’ বাপেক্স যথাযথ কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান চায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা