খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপির মশাল মিছিল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০১:১২
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কাকরাইলের নাইট এঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারো দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মশাল মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেনÑ দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীনসহ শতাধিক নেতাকর্মী। মিছিলে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দেন। একইসাথে সম্প্রতি বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পিটুনিতে নিহত আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেও ¯েøাগান দেন।
মশাল মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নানা অপকর্ম করে নিশ্চিন্তে দেশ শাসনের লক্ষ্যে জনগণের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, আপসহীন দেশনেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জোর করে বন্দী রাখা হয়েছে। তাকে সুচিকিৎসা না দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান মধ্যরাতের ভোটের সরকার। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশনেত্রীকে আর কষ্ট দেবেন না। তার জামিনে বাধা দেবেন না। আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন।
‘খালেদা জিয়াকে হয়তো সারা জীবনই জেলে কাটাতে হবে’- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের এই বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কথায় যে বেগম জিয়া জেলে গেছেন- এটা মাহবুবউল আলম হানিফের বক্তব্যেই প্রমাণিত হলো। আপনারা দেশ বিক্রি করবেন, মাটি বিক্রি করবেন, পানি বিক্রি করবেন, আপনারা আমাদের উপক‚ল অন্যকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেবেন- এর বিরুদ্ধে যাদের কণ্ঠ আপসহীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করার জন্য সোচ্চার থাকবেন তাকেই তো আপনারা জেলে রাখবেন। আপনারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, বাকস্বাধীনতা হরণ করে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে আপনারা অন্ধকারে রেখেছেন। তাই এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে মশালের আলোতে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্তি করব, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব ইনশা আল্লাহ।
ছাত্রলীগের কারণে ছাত্র রাজনীতি দায়ী হতে পারে না : রিজভী
ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে সমগ্র ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, দুর্নীতির অজুহাতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের চক্রান্ত গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। গতকাল ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মহেশপুরে প্রত্যেকটি কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর ও বের করে দেয়া হয়েছে এবং রাস্তার মোড়ে-মোড়ে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একই অবস্থা সাতকানিয়াতেও। এই দুই উপজেলাতে দলীয় সন্ত্রাসীদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুলিশও ভোটারদের বের করে দেয়। এই দুই উপজেলায় ভোটের নামে প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতির উৎসব শুরু হয়েছে। অর্থাৎ মানুষকে ভোট দিতে না দেয়াটাও মহাদুর্নীতি। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে যারা কলুষিত এবং মারামারি-দলাদলিকে যারা উৎসাহিত করেছে, ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বিস্তারে যারা মদদ দিয়েছে তারাই প্রকৃত ছাত্ররাজনীতিকে মানুষের চোখে হেয় করেছে। তারা এখন সমগ্র ছাত্ররাজনীতিকে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। যুগে যুগে এই ছাত্র সমাজই অন্যায়-অসাম্য-অবিচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিজভী বলেন, ছাত্রসমাজের সেই মহিমামান্বিত ঐতিহ্য ¤øান করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। স্বাধীনতার পরপরই ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও শহীদ মিনারে ছাত্রী লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের যাত্রা শুরু করে। তাদের উত্তরসূরিরাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে প্রচলিত বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে নিষ্ঠুর ও সর্বনাশা নির্যাতন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ছত্রছায়ায়। হলে হলে টর্চার সেল গঠিত হয়েছে। একের পর এক ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ দ্বারা শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা ঘটছে। এর ভয়ঙ্করতম রূপ দৃশ্যমান হলো মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তাকে মারধরের খবর পেয়ে একজন পুলিশ উপপরিদর্শক সেখানে ছুটে গেলে ছাত্রলীগের নেতাদের বাধার কারণে সে কিছু করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে এই কয়েক বছরে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা কোনো নীতির ধার ধারেনি। এই কদাচারের জন্য সমগ্র ছাত্রসমাজ বা ছাত্ররাজনীতি দায়ী হতে পারে না। সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরঙ্কুশ আনুগত্যের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন-কানুন, বিচারের তোয়াক্কা করছে না ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন। আত্মসম্মানহীন একটি নিপীড়ক সংগঠন ছাড়া ছাত্রলীগ আর কিছুই নয়।
ঝিনাইদহ ও সাতকানিয়ায় ভোটগ্রহণে অনিয়মের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করলে তারা দেখছি বলে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। যারা ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচন করে তাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা অরণ্যে রোদন। নির্বাচন কমিশন সরকারের যাদুর বাক্সে পরিণত হয়েছে। তারা দিনের নির্বাচন রাতে করে এবং ভোটার তালিকায় জীবিত মানুষকে মৃত দেখায়। বিগত নির্বাচনগুলোতে যে ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়েছেন; কিন্তু ভোটার তালিকায় এখন তাদের মৃত দেখানো হচ্ছে। এই যাদুকর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের অধীনে নির্বাচনে প্রকৃত ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই।
‘এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়া কি সুনীতি? এটাতো এক মহাদুর্নীতি। পুলিশ এবং সরকারি দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দিনে-দুপুরে ভোট জালিয়াতি করা মহাদুর্নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। আর এই মহাদুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বুক ফুলিয়ে বিগত ১০-১১ বছর ধরে করে আসছেন ক্ষমতাসীনরা। দু-একজন চুনো পুঁটিকে ধরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নয় বরং এর নামে বড় বড় দুর্নীতিকে আড়াল করা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা