২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারত-বাংলাদেশ নতুন রেল রুট

নতুন পরিকল্পনায় আখাউড়া-আগরতলা ও ফেনী-বিলোনিয়া রুট :চালু আছে বেনাপোল, দর্শনা, রোহানপুর ও বিরল রুট
-

রেলপথে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে আরো একটি ইন্টারচেঞ্জ চালু করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চিলাহাটি ও হলদিবাড়ির মধ্যে নতুন করে এই রেল সংযোগ চালু করা হলে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকরণ হবে। এই ইন্টারচেঞ্জটি চালু হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাঁচটি ইন্টারচেঞ্জ হবে। বাকি থাকবে আরো দু’টি। সেগুলোও নির্মাণের মাধ্যমে চালু করে দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পের খসড়া করা হয়েছে বলে রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
রেলপথ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট সাতটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট রয়েছে। ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টগুলোর মধ্যে বর্তমানে চারটি রেল সংযোগ চালু রয়েছে। এসব ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট হলোÑ বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে, রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ ও বিরল-রাধিকাপুর। নতুন করে যে পথটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি হলো চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি। খসড়া প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা ও ফেনী-বিলোনিয়া রুটের। ২০১৫ সালের ২৫ থেকে ২৭ মে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃসরকার রেলওয়ে মিটিং-এ (আইজিআরএম) চিলাহাটি ও হলদিবাড়ির মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দুই দেশের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোট সাত কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করতে হবে। ভারত ও তৎকালীন পূর্ব পকিস্তানের মধ্যে চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি হয়ে রেলওয়ে সংযোগ ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর এ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে রেলওয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে সাড়া (পাকশীর কাছে) থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত মিটার গেজ এবং দামুকদিয়া (সাড়া এর উল্টো দিকে) থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হয়। ১৯০৯ সালে পোড়াদহ থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত সিঙ্গল লাইনকে দ্বৈত লাইনে রূপান্তর করা হয়।
১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালুর মধ্য দিয়ে দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে সান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত এবং ১৯২৬ সালে পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়। সে সময় শিয়ালদহ ও শিলিগুড়ির মধ্যে সান্তাহার-পার্বতীপুর হয়ে দার্জিলিং এক্সপ্রেস এবং নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেস নামে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হয়। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই দু’টি রুট তখন ব্যাকবোন হিসেবে বিবেচিত হতো। পরে লিংকটি চালু না থাকায় দু’টি দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী রেলওয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যও ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে।
রেলের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ভারতের হলদিবাড়ি অংশে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে তাদের অর্থায়নে। এ পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেল চলবে। নতুন এ সংযোগে মোংলা বন্দর হয়ে ভারতের পূর্ব অংশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য সহজ হবে। এই পথে রেলযোগে বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) সংযোগের অন্যতম রুট হবে এই রেলপথ। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের পরিত্যক্ত বিভিন্ন রুটে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে বৃহত্তর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা যা হবে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা। প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে দেখা গেছে, সাত কিলোমিটার লাইন নির্মাণের জন্য মোট ৪৮ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার টাকা লাগবে। এতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ছয় কোটি ৮৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এটি ছাড়া আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেল রাস্তা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের খসড়া ডিপিপিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশের দিকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হবে। আশা করা যাচ্ছে ২০১৮ সালে এটি চালু হবে। কুলাউড়া-শাহজাদপুর রুটটি পুরনো। এটি চালু করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নতুন রুট ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন তৈরি করার জন্য গবেষণা চলছে। এই প্রকল্পে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) পার্ট-২ অনুযায়ী, ৮৬৫ কিলোমিটার নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ, এক হাজার ১১০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, ৭২৫ কিলোমিটার বিদ্যমান রেল ট্র্যাক পুনর্বাসন, রেলব্রিজ নির্মাণ এবং ১০০টি নতুন লোকোমোটিভ, চারটি রিলিফ ক্রেন, এক হাজার ১২০টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ ও ৬২৪টি কোচ পুনর্বাসন করার কথা। ৮১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement