০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ঘরেই এডিস মশার বাস

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৩২ চারজনের মৃত্যু

-

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর এই জ্বরে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে চারজন। তাদের একজন শক সিন্ড্রোমে মারা গেছেন। অবশিষ্ট তিনজন হেমোরেজিক (রক্ত বের হয়ে মৃত্যু) হয়ে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৪ জন। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘরের মধ্যেই বাস করে। ঘরের মধ্যে মশা বাস করার স্থান তিন-চার দিন পরপর পরিষ্কার করতে না পারলে এ মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। জরিপের পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা কম। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩ ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকায় দুই হাজার বসতবাড়িতে এই জরিপটি চালানো হয়। এর মধ্যে ১৯ স্থানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মশার সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াবাহী মশার তেমন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এসব এলাকার ৯৭ শতাংশে অ্যানোফিলিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই মশা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ার জীবাণু বহন করতে পারে না। বড় জোর ম্যালেরিয়া হতে পারে অ্যানোফিলিস মশা থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য কিটস সরবরাহ করা হয়েছে। এ হাসপাতালগুলো হচ্ছেÑ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসকদের স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কারণ নেই, বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের তথ্যানুসারে ২০০২ সালে দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ছয় হাজার ২০০ জন। তবে ডেঙ্গু মশায় বেশি মৃত্যু হয় ২০০০ সালে এবং মারা যান ৯৩ জন। তবে ২০১৬ সালে আক্রান্ত ছয় হাজার ৬০ জন এবং মারা যান ১৪ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৭৬৯ এবং মারা যান আটজন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ সময়টা জ্বরের সময়। রাজধানীর বেশির ভাগ ঘরেই শিশুরা এমনকি বয়স্করাও জ্বরে ভুগছে। ভাইরাসজনিত কারণে জ্বরই বেশি। জ্বর হলেই ডেঙ্গু অথা চিকুনগুনিয়া হয়েছে তা ভেবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, ভাইরাল জ্বরে সুনির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। আবার ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ায় ভুগলে তারও সুনির্দিষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পাবে শরীরে। ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশা কামড়ে সাধারণত ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বর ভালো হয়ে যায়, তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে গেলে তা রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে। এমন হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪-১০৫ ডিগ্রি (ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে মাথা ব্যথা, মাংসপেশি, চোখের পেছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, ত্বকে লালচে ছোপ (র্যাশ) দেখা দেবে। এ সময় রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারির ভেতরে বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বরে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই এসপিরিন (এনএসএআইডি) জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে দাঁতের মাঢ়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিলম্ব না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
এডিস মশা সাধারণত বাড়ির ভেতরে ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের তলায় ও আশপাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা জমাকৃত পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্যাস্তের আগে কামড়ায়।


আরো সংবাদ



premium cement