২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ শাবান ১৪৪৬
`

কৃষকের শীতল ঘর ছোট হিমাগারে বড় সুরক্ষা

সবজির দাম না পাওয়া কৃষক পাবেন নতুন পথের দিশা
-

ফসলের ভরপুর ফলনে আনন্দ আবেশের বদলে কখনো কখনো চাষির মন পোড়ে। এই যেমন এবারো দাম না পাওয়া সবজি চাষির চোখের আঙিনায় জল দেখেছে দেশ। বাড়তি সবজি সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় প্রতি বছরই ভরা মৌসুমে কৃষক হৃদয়ে কষ্ট জমে। দীর্ঘমেয়াদি সবজি সংরক্ষণে সরকারিভাবেও কোনো ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় চাষির আর পথ খোলা থাকে না। উপায় না দেখে পানির দরে সবজি বেচে মাঠ খালি করে কৃষকরা। চাষির বেদনার আকাশের মেঘ কাটতে যাচ্ছে অবশেষে। কৃষকের মুখে হাসি ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। চাষির ঘামে ভেজা খাটুনির সবজি শীতল থাকবে ফার্মার্স মিনি কোল্ডস্টোরেজে। ‘কৃষকের শীতল ঘর’ নামে এই হিমাগার দেবে নতুন পথের দিশা।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এসএম শহীদুল কবির লিপুর ২৫ বিঘা জমির পুরোটাই সমন্বিত খামার। এ মৌসুমে নানা পদের সবজি ফলিয়ে মাঠে মার খেয়েছেন তিনি। গাছে গাছে এখনো ঝুলছে অনেক সবজি, বেচতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতেই। আচকা তিনি খোঁজ পান সাভারের রাজালাখের হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলক দুটি মিনি কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করছে সরকার। কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ১৫ দিন আগে ওই হিমাগারে ২ টন নানা জাতের সবজি সংরক্ষণ করেন লিপু। তার আশা, আসছে রোজায় এসব সবজি বিক্রি করে লাভ পকেটে তুলতে পারবেন। আরো কয়েকজন চাষিও হিমাগারে টমেটো, শসা, লাউ, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, বেগুন, গাজর, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি সংরক্ষণ করেছেন। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে হিমাগার দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কৃষি উপদেষ্টা মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সাভারের হর্টিকালচার সেন্টারে দেখা যায়, ১০ টন ধারণক্ষমতার কৃষকের এই শীতল ঘরে ১৫ দিন আগের রাখা সবজি এখনো তরতাজা। সবজিতে নেই কোনো দাগ। সাধারণত ফ্রিজে সবজি সংরক্ষণ করা হলে ওপরের খোসা কুচকে যায়। তবে এই হিমাগারে সংরক্ষণ করা সবজিতে এমনটা দেখা যায়নি। একই দিনে কৃষি উপদেষ্টা উন্মোচন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অ্যাপস ‘খামারি’। অ্যাপটিতে ঢুকলেই এলাকাভিত্তিক মাটির বৈশিষ্ট্য, ফসলের অর্থনৈতিক দিক, আবহাওয়া-জলবায়ুর তথ্য, ফসলের উপযোগিতা, সার সুপারিশ, ফসল জোন, শস্য বিন্যাস, সংরক্ষণের তথ্যসহ নানা উপাত্ত মিলবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাশরুরের তত্ত্বাবধানে দুটি মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হয়। একটি রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারের ঘরের ভেতরে, আরেকটি খোলা আকাশের নিচে কনটেইনারভিত্তিক ও সৌরচালিত। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য আধুনিক শীতল সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যকে সঠিক সময়ে বাজারে উঠানো। এর মাধ্যমে মৌসুমে দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ, ফসলের অপচয় রোধ ও কৃষকের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা কমবে। কৃষক সরাসরি বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বেচার সুযোগ পাবেন। কমবে মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব।
হিমাগার পরিদর্শন শেষে কৃষি উপদেষ্টা মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সবজি সংরক্ষণে দেশে কোনো হিমাগার নেই। এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের ফসল সংরক্ষণে বড় পরিবর্তন আনবে। কৃষক নিজেই তার উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করে বেচতে পারবেন। এতে বাম্পার ফলন কৃষকের জন্য অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হয়ে আসবে।
কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষকের শীতল ঘরের মাধ্যমে আমরা ফসলের অপচয় কমাবো। কৃষকদের লাভজনক উৎপাদনের সুযোগ বাড়বে। সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করা হবে। এ বিষয়ে কৃষককে দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। আপাতত সারা দেশে এ রকম আরো ১০০ মিনি কোল্ডস্টোরেজ সরকার নির্মাণ করে দেবে। কৃষক বিনা মূল্যে সেখানে সবজি সংরক্ষণ করতে পারবেন। খামারি অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষক জমিতে দাঁড়িয়ে কোন ফসল ভালো হবে, কি পরিমাণ সার ও কীটনাশক দিতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারবেন। এ রকম নিত্যনতুন আরো উদ্ভাবন নিয়ে আমরা কৃষকের সামনে হাজির হবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: ছাইফুল আলম বলেন, এই কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের জন্য নতুন দরজা খুলবে। এখন কৃষক নিজেই ফসল সংরক্ষণের মাধ্যমে দর নির্ধারণ করতে পারবেন। উন্নত এই প্রযুক্তি আমরা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।
‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাশরুর বলেন, স্থানীয় ও আমেরিকান হাইটেক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের শীতল ঘর তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেট-ভিত্তিক এবং রিয়েল-টাইম তদারক সুবিধা থাকায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মাত্র ৫ লাখ টাকা খরচে কৃষক নিজের বাড়িতেই এই এটি তৈরি করতে পারবেন। আর কনটেইনারে সোলারসহ বানাতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা। প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের চেয়ে এখানে খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কম লাগবে। তিনি বলেন, সোলার মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য একটি পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই সমাধান। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমায় এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে। ১০ টন ধারণক্ষমতার কোল্ড স্টোরেজ বছরে সাড়ে ৩ হাজার কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে পারে, যা সমপরিমাণ কার্বন হ্রাসের জন্য প্রায় ১৪০-১৬০টি পরিণত গাছের বার্ষিক শোষণ ক্ষমতার সমান। সোলার কোল্ড স্টোরেজ খাদ্য সংরক্ষণ, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইংল্যান্ডের বিদায়, আশায় আফগানিস্তান পাটজাত পণ্যে ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের সমাধান চায় বিজেএসএ আমরা ক্ষমতায় গেলে পুঁজিবাজারকে ধারণ করব : আমীর খসরু প্রহসনের কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ অংশ নেয়নি : আব্দুল আজিজ হাওলাদার ১-৩ গোলে হার বাংলাদেশের ব্যাংকে কত টাকা আছে জানালেন নাহিদ ইসলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের বিক্ষোভ আজ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে রাখাইনে স্বীকৃতি পেতে পারে আরাকান আর্মি ভোরে পুলিশের টহল কার্যক্রম পরিদর্শন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ছাত্রদের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বেসরকারি শিক্ষার্থীদের ইংল্যান্ডকে বিদায় করে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল আফগানিস্তান

সকল