যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজা দখলের প্রস্তুতি ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
- ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তিতে নতুন শর্ত ইসরাইলের
- গাজায় তীব্র শীতে ৩ শিশুর মৃত্যু
- একমাত্র সমাধান দ্বিরাষ্ট্র : ইইউ
ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বলেছেন, নতুন সেনাপ্রধান আয়াল জামিরের নেতৃত্বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সহায়তায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকা দখল করার জন্য প্রস্তুত। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি (এএ) এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, সোমবার ইসরাইলের কনেসেটের এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্মোটরিচ বলেন, লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রুপ এখন কয়েক দশকের মধ্যে তার সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। এটি লেবানন সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সিরিয়ায় স্থলসড়ক সরবরাহ পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তাদের নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। গাজার পশ্চিমতীর এবং উত্তর গাজার জাবালিয়ার মতো পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত করার হুমকি দিয়ে স্মোটরিচ বলেন, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী জাতিগত নির্মূল অভিযান চালিয়েছে।
তিনি গর্ব করে বলেন, পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবির থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়েছে এবং সেই স্থানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা যখন যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেব, তখন তাদের অভ্যন্তরে একত্রিত শক্তি এবং নিষ্ঠুর আঘাত তাদের আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে। স্মোটরিচ হামাসকে কড়া প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের এক বিন্দুও নিঃশেষ থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, তার দেশের সামরিক বাহিনী পশ্চিমতীরে হামাসের বিরুদ্ধে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করছে। গত মাসে গাজায় এক যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। এর আগে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে প্রায় ৪৮ হাজার ৩৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত নভেম্বরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তিতে নতুন শর্ত ইসরাইলের : ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তাদের কাছে আটকা চার বন্দীর লাশ অবিলম্বে ফেরত দিলে ৬০২ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরাইল। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের এমনটাই জানিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়াইনেট নিউজ। ইসরাইলের দাবি, হামাস যেন কফিন দিয়ে কোনো ‘আনুষ্ঠানিকতা’ না করেই বন্দীদের লাশ ফেরত দেয়, যেমনটি তারা গত সপ্তাহে বিবাস ও ওদেদ লিফশিৎজের লাশ দিয়ে করেছিল। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস তাদের হাতে বন্দী জীবিত ও মৃত বন্দীদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরাইল তাদের হাতে আটক শত শত বন্দীকে মুক্তি দেবে। তবে সবশেষ বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় হামাস ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দিলেও ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে না বলে জানিয়ে দেয় তেল আবিব কর্তৃপক্ষ। শনিবার হামাসের হাতে বন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া মা শিরি বিবাস ও তার দুই ছোট সন্তান আরিয়েল ও কেফিরের লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে ইসরাইলিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ দিকে হামাসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াইনেট জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের অধীনে তাদের ফিরে আসা চারজন মৃত বন্দীকে কেবল তখনই হস্তান্তর করা হবে, যখন ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে। রোববার হামাসের মুখপাত্র মাহমুদ মারদাউই বলেছেন, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে আলোচনা স্থগিত রাখবে যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে সম্মত হয় ইসরাইল।
গাজায় তীব্র শীতে ৩ শিশুর মৃত্যু
আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ইতিহাসের এক কঠিন মুহূর্তে, গাজার পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘তীব্র শীতের’ কারণে আরো তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সরাইল গাজার জন্য জরুরি তাঁবু ও মোবাইল বাড়ি প্রবেশে বাধা দিয়ে এ পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে। এর ফলে শীতের তীব্রতায় অসহায় শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে, যা এ অঞ্চলের মানবিক সঙ্কটের আরো তীব্র হচ্ছে।
এ দিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর গাজা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং এক লাখ ১১ হাজার ৭৫৯ জন আহত হয়েছে। সরকারের মিডিয়া অফিস মৃত্যুর সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০৯ পর্যন্ত বলছে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যারা ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন, তাদের নিহত হিসেবে ধরা হচ্ছে। গাজার পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ায় মানবিক সহায়তা প্রদান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা জরুরি হয়ে উঠেছে।
আরো ৫ জনের লাশ উদ্ধার : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরো পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গত ২৪ ঘণ্টায় দু’জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এ সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
একমাত্র সমাধান দ্বিরাষ্ট্র : ইইউ
ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সমস্যার দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক কাজা ক্যালাস। ইইউ-ইসরাইল অ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিলের বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর ডেইলি সাবাহর। কাজা ক্যালাস বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজায় তাদের প্রত্যাবর্তনকে সমর্থন করি। আমরা প্রতিটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি যাদের গাজা আবাসস্থল, তাদের প্রত্যাবর্তনকে সমর্থন করি।’
তিনি বলেন, যখন সময় আসবে, তখন ইইউ আঞ্চলিক পক্ষগুলোর সাথে গাজার পুনর্গঠনকেও সমর্থন করবে। ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই গাজায় থাকতে দিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সোমবার ব্রাসেলসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে পশ্চিমতীরে অভিযান এবং গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ক্যালাস বলেন, আমরা ঘটনাবলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, এবং পশ্চিমতীর নিয়েও আমাদের উদ্বেগ গোপন করতে পারছি না।
২০২২ সালে ইইউ ও ইসরাইলের মধ্যে হওয়া একটি অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির কাঠামোর অধীনে এই প্রথম উভয়পক্ষের মধ্যে কোনো বৈঠক হলো। পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের বিষয়ে ইইউর সমালোচনার কারণে এক দশক ধরে এ ধরনের আলোচনা স্থগিত রেখেছিল ইসরাইল। স্পেন ও আয়ারল্যান্ড গত বছর গাজায় সংঘটিত অপরাধের কারণে ইসরাইলের সাথে তাদের অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্থগিত করার জন্য ব্লককে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু ইইউর অন্যান্য ইসরাইলপন্থী দেশ এ পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বৈঠকের বিষয়ে ইসরাইলি মন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেন, ‘আমি সব সদস্যরাষ্ট্রের অবস্থান শুনেছি, তাদের অবস্থান ও তাদের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি এবং ইসরাইলের অবস্থান তুলে ধরেছি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা