২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

ভারতের সাথে ভালো কার্যকর সম্পর্ক চাই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

-


ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমরা ভারতের সাথে একটা ভালো কার্যকর সম্পর্ক চাই, যেটা হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। গত রোববার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুর জন্য দিল্লিকে অব্যাহতভাবে দোষারোপ করে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দাবি করতে পারে না ঢাকা। এখন বাংলাদেশকে মনস্থির করতে হবে ভারতের সাথে তারা কী ধরনের সম্পর্ক চায়।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনি (জয়শঙ্কর) বলেছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশ কেমন সম্পর্ক চায় সেটা বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাংলাদেশ নেবে। একইভাবে ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দুই পক্ষেরই বিষয়, এটা বলাতে দোষের কিছু নাই।

উপদেষ্টা বলেন, জয়শঙ্কর অভিযোগ করেছেন, সরকারের ভেতরে থেকে বাংলাদেশের নানাজন বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলছেন। আমি এটা নিয়ে ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা হলো, এ রকম কথা ওনাদের ওখান থেকেও বলা হচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের রক্ষায় পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে এখানে জাতিসঙ্ঘ ফোর্স পাঠিয়ে দেন। ভারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহরহ বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়েই আমরা চেষ্টা করছি সম্পর্ক ভালো করা যায় কিনা। কাজেই আমাদের অবস্থান সেটাই। আশপাশ থেকে দুই-চারজন কী বলল না বলল সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং নিজেদের সম্পর্কটা ভালো করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় আতিথেয়তায় থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। এগুলো দু’দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ওনার বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালছেÑ এটা তো স্বীকৃত ব্যাপার, এটা সবাই জানে।
উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘু নিয়ে জয়শঙ্কর আবারো কথা বলেছেন। এই অভিযোগ প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ার বিকৃত তথ্যপ্রবাহে সৃষ্টি হয়েছে। তার ভিত্তিতে এগুলো বিভিন্নজন নানা জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তেমনি ভারতের সংখ্যালঘুর বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

ভারতীয় ভিসা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভিসা দেয়া বা না দেয়া ভারতের অধিকার। তারা কাউকে ভিসা না দিলে আমাদের কিছু বলার নাই। যখন ভিসা দেয়া হচ্ছে না তখন আমরা বিকল্প খুঁজে নেব। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বিকল্প দেখতেই হবে।
আফ্রিকায় সুযোগ অন্বেষণ করতে হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আফ্রিকা অঞ্চলকে আমাদের জানতে হবে। তাদের যেমন সুযোগ দিতে হবে, একই সাথে আমাদেরও সুযোগ নিতে হবে। আফ্রিকায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ অন্বেষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশই বিনিয়োগ বলতে মাইনিংয়ে (খনি) বিনিয়োগ বুঝে থাকে। তবে এ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নেই। আফ্রিকার কৃষি খাত, সফটওয়ার, ওষুধসহ নানা খাতে আমাদের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। বাংলাদেশকে সেসব সুযোগ নিতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘লুক আফ্রিকা : এক্সপ্লোরিং নিউ হরাইজন্স ফর বাংলাদেশ’ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সব কথা বলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।

রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এক সময়ে আফ্রো-এশিয়া সংহতি ছিল। এটা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কেননা এখন আফ্রিকার সাথে সম্পর্কে অগ্রগতি হচ্ছে। আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) রয়েছে। বিভিন্ন দেশে এর সুযোগ নিতে পারে। আমাদেরও সুযোগ খুঁজতে হবে।
বইটির ওপর বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. রাজিয়া সুলতানা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জাহিদ-উল-ইসলাম, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) অধ্যাপক ও গবেষণা পরিচালক ড. মুন্সী সুলাইমান এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মারুফা আক্তার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, ১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর মাধ্যমে আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুরু হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় অবদান রেখে আসছে, জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য ও পুলিশ পাঠাচ্ছে। আফ্রিকা অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরো গভীর সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলেন, উপনিবেশবাদের বিচ্ছিন্নতার সময়ে আফ্রিকা ও এশিয়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে আফ্রিকার সাথে সম্পৃক্ততার পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement