আইটিএফসির ৫০ কোটি ডলার সার-ঋণ ঝুলে আছে সুদহারে
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৪
জরুরি ভিত্তিতে সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ ঋণ দিতে রাজিও হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি)। কিন্তু ‘গোল’ বেধেছে ঋণের মুনাফা বা সুদের হার নিয়ে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বলেছে, সংস্থাটি থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নিতে হলে সম্ভাব্য সুদ গুনতে হবে ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ওই দিকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআইসি) এই ঋণ নিতে নেতিবাচক মতামত দিয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএডিসির সুদের হিসাবপদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ থেকে এ সম্পর্কে তিনটি বিষয় জানানোর জন্য এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগকে জানানো হয়েছে, দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকারের সারের মোট চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দেশে বিদ্যমান সার কারখানাগুলোর মাধ্যমে ওই চাহিদার অতি সামান্য অংশ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। অবশিষ্ট সার সরকারি পর্যায়ে বিসিআইসি ও বিএডিসির মাধ্যমে এবং বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। সার আমদানিতে প্রতি বছর সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে টেকসই সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে আমদানি মূল্য যথাসময়ে পরিশোধের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ৫০০ (৫০ কোটি ডলার) মিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা গ্রহণের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর জ্বালানি ও সার খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বিষয়ে আলেচনার জন্য আইটিএফসি এবং বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সৌদি আরবের জেদ্দায় এক সভায় মিলিত হয়। ওই সভায় আইটিএফসি থেকে জ্বালানি ও সার খাতে মোট দুই হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে উভয়পক্ষ প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়। এই ঋণের মধ্যে সার আমদানির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণও থাকবে। সার খাতে ওই ঋণের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার কনফার্মড ঋণ এবং অবশিষ্ট ৩০০ মিলিয়ন ডলার কন্টিনজেন্সি ঋণ। যেহেতু ঋণটি অনমনীয় প্রকৃতির সেহেতু এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আওতাধীন নন-কনসেশনাল লোন কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে, ঋণ চুক্তি সম্পাদিত হলে প্রতিটি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে সার আমদানি মূল্য আইটিএফসি কর্তৃক তাৎক্ষণিক ডলারে পরিশোধ করা হবে জানানো হয়েছে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় যথাসময়ে রফতানিকারকদের বিল পরিশোধিত হলে সার আমদানির ক্ষেত্রে শিডিউল/এলসি বিপর্যয়ের আশঙ্কা দূর হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এলসি স্থাপনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলারের ওপর তাৎক্ষণিক চাপ কমবে। তবে ওই ঋণ গ্রহণের বিষয়ে বিএডিসি ও বিসিআইসি উভয়েই নেতিবাচক মতামত দিয়েছে।
বিএডিসি জানিয়েছে যে, আইটিএফসি কর্তৃক প্রস্তাবিত ঋণের শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আইটিএফসি ঋণের বার্ষিক মার্কআপ/মুনাফার হার অপাতঃদৃষ্টিতে ৬.৪৩৭ শতাংশ হলেও প্রকৃত পক্ষে ওই ঋণের শর্তানুযারী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হলে অর্থ বিভাগ থেকে যথাসময়ে ভর্তুকির অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের এলটিআর ঋণের সুদের হার ১২.৫০-১৩.০০ শতাংশ, যা আইটিএফসি কর্তৃক প্রস্তাবিত ঋণের সম্ভাব্য ব্যয়ের তুলনায় কম হবে। এর ফলে আইটিএফসি থেকে ঋণ গ্রহণ করে সার আমদানি করা হলে ব্যয় তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে ভর্তুকির পরিমাণও বেড়ে যাবে বলে বিএডিসি মতামত ব্যক্ত করেছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত ঋণের ব্যবস্থাপনা ও দায় পরিশোধ মূলত বিসিআইসি ও বিএডিসিকে করতে হবে। সেক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মতামতের পূর্বে বিসিআইসি ও বিএডিসি থেকে ওই ঋণ গ্রহণের বিষয়ে নিঃশর্ত সম্মতি থাকতে হবে। এ অবস্থায় সার আমদানির জন্য আইটিএফসি থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ গ্রহণের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত প্রদানের সুবিধার্থে তিনটি বিষয় জানতে চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এক. বিসিআইসি কর্তৃক ফান্ড হোল্ডিং কস্ট ৩.২৫ শতাংশ এবং ডলার এক্সচেঞ্জ ফ্লাকচ্যুয়েশন লস ৮.৮৫ শতাংশ কিভাবে ধার্য করা হয়েছে এবং এর ভিত্তি কী তা অর্থ বিভাগকে অবহিত করা।
দুই. কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইআরডি আইটিএফসিকে অর্থায়নের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বিসিআইসি ও বিএডিসি আইটিএফসি থেকে ঋণ গ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। এমতাবস্থায়, এ ঋণ গ্রহণ করার যৌক্তিকতা রয়েছে কি না তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জানা ।
তিন. আইটিএফসি থেকে ঋণ গ্রহণ করা না হলে সার আমদানির জন্য বিসিআইসি ও বিএডিসি অন্য কোনো উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে কি না তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগকে জানানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা