২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

-

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান জানিয়েছেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরো বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি কাসুর ও ফয়সালাবাদ সফর শেষে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গতিশীল করার জন্য তিনি ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক সম্প্রদায়ের সাথে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। নিজের এ সফরকে উৎপাদনশীল ও ফলপ্রসূ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজের বরাতে জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের তুলা, চিনি, চাল, পোশাক (বিশেষ করে মহিলাদের পোশাক), ফলের (বিশেষ করে আম) ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ পাকিস্তানে আনারস, পাট, ওষুধ ও গার্মেন্ট পণ্য রফতানি করতে পারে।

হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা অসীম। ইতোমধ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশে ২৬ হাজার টন চাল রফতানি করেছে। এটি প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথম ঘটনা। ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের (টিসিপি) মাধ্যমে মোট ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করা হবে। যার বাকি ২৪ হাজার টন আগামী মাসে রফতানি করা হবে।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (বিটিসি) পাকিস্তান থেকে চাল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে টিসিপি একটি টেন্ডার আহ্বান করে। টিসিপি ৫০ হাজার টন লং-গ্রিন হোয়াইট রাইস (আইআরআরআই-৬) এবং ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি পারবোয়েলড রাইসের টেন্ডার আহ্বান করে। তবে নন-বাসমতি পারবোয়েলড রাইসের জন্য কোনো বিড না আসায় নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, বাংলাদেশে চাল রফতানির জন্য কোম্পানিগুলোকে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। চালের ৬০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর এবং ৪০ শতাংশ মোংলা বন্দরে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পাঁচ দশকের বেশি সময় পর সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আবারো শুরু করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের পর চলতি বছরই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। এ আমদানি এরই মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

আগস্টে হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে, ঢাকা ইসলামাবাদের মধ্যে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী ইউনূস পাকিস্তানের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের সাথে তার আলাপচারিতার সময়, বাংলাদেশী নেতা বিষয়গুলো ‘মীমাংসা’ করার এবং ‘এগিয়ে যাওয়ার’ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট শুরু হবে। পাকিস্তানের সাথে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য দেশটির নাগরিকদের জন্য অনলাইনে বাংলাদেশী ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান আরো বলেছেন যে ‘দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য আকাশই সীমা।’
এই মাসের শুরুতে চূড়ান্ত হওয়া নতুন চুক্তিতে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের মাধ্যমে প্রতি টন ৪৯৯ ডলারে সাদা চাল কিনবে। তবে, ভিয়েতনামের চালের তুলনায় পাকিস্তানি চালের দাম বেশি, যা বাংলাদেশ প্রতি টন ৪৭৪.২৫ ডলারে আমদানি করছে। বাংলাদেশ চালের বাজার স্থিতিশীল করার জন্য লড়াই করছে, কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে চালের দাম ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, মাঝারি মানের চাল প্রতি কিলো প্রায় ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে আরো বেশি চাল আমদানি করছে এবং আমদানি শুল্ক বাতিল করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement