২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

এনজিওদের প্রভাবেই তামাক অধ্যাদেশের সংশোধনী

-


ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ সংশোধন নিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পথেই হাঁটছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের বাদ দিয়ে কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রভাবে করা এ সম্পর্কিত আইনটির সংশোধনীর খসড়া বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করে বিগত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখনো সেই আগের অবস্থাই চলছে। কিছু এনজিওর প্রভাবে অধ্যাদেশে বৈষম্যমূলক সংশোধনী আনা ও তা বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের একটি মহল।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য গত বছরের ৯ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের সার্বিক ও বহুমাত্রিক প্রভাব পর্যালোচনা, রাজস্ব আদায়সহ তামাকজাত দ্রব্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আয়ের ওপর প্রভাব পর্যালোচনা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রভাব পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত বা পরামর্শ পর্যালোচনা করে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জনের সুপারিশ করা।

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি এই উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী তামাক কোম্পানি, পাইকারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ এ খাতে সরাসরি সম্পৃক্ত অংশীজনদের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেখানে বেসরকারি খাত বলতে শুধু কয়েকটি এনজিওকে ডাকা হয়। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বিষয়ে একটি প্রস্তুতিমূলক সভা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানেও অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ও উপস্থিতির ক্ষেত্রে ছিল প্রায় একই চিত্র। ছিলেন না আইন সংশোধন সম্পর্কিত সরাসরি কোনো অংশীজন।
এ অবস্থায় অধ্যাদেশটির খসড়া পরিমার্জনের এ উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। এ সম্পর্কিত কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপেক্ষিত অংশীজনেরা। তারা বলছেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া পরিমার্জনের ক্ষেত্রে তথাকথিত কিছু এনজিওর চাওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দেশের রাজস্ব আদায়, কর্মসংস্থান, কৃষি খাতকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

২০০৫ সালে প্রণীত সংশ্লিষ্ট আইনটি ২০১৩ সালে একবার সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালে আবারো আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ সরকার সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া, খসড়া প্রস্তুত করা- কোনো পর্যায়েই এনজিও ছাড়া অন্যান্য অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করেনি।
বিগত সরকারের আমলে খসড়া নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, খসড়ায় একাধিক কঠিন ধারা আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রায় ১৫ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী জীবিকা নিয়ে সঙ্কটে পড়বে। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বিকল্প কর্মসংস্থানের কথাও বলা হয়নি খসড়ায়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতামতও খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে অধ্যাদেশটিকে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য করা প্রয়োজন। তা না হলে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশের রাজস্ব আদায় ও কর্মসংস্থান।

 


আরো সংবাদ



premium cement