মেলায় প্রতিদিন ১০৬ বই প্রকাশিত
- আবুল কালাম
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বইমেলা শুরুর পর গতকাল ছিল ২৩তম দিন। আজ বাদে আর মাত্র চারদিন বাকি। এর পরই সাঙ্গ হবে প্রাণের মেলা। কিন্তু পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় মোট ২৪২৮ বই প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রতিদিন বই প্রকাশের গড় হার ১০৫ এর চেয়েও বেশি।
প্রকাশকরা বলছেন, বই প্রকাশের এমন হার কম নয়। কিন্তু সমস্যা হলো মান নিয়ে। বিগত দিনে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা একেবারেই কম। এত বইয়ের আড়ালে মানহীনতার এই সংস্কৃতিকে লেখক আর প্রকাশকের দৈন্যতা বলে পাঠকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন যে পরিমাণ বই প্রকাশিত হয়েছে তা যদি মান ধরে রাখতে পারত তবে বলা যেত দেশে নতুন লেখক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন অবস্থায় এটা প্রতিয়মান যে দেশে বই বাড়লেও সম্ভাবনাময় লেখক বাড়ছে না। এর ফলে এক সময় হয়তো আসবে যখন বই থাকলেও পাঠক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মেলায় চলতি সপ্তাহের মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার ছিল সবচেয়ে বেশি বিক্রির দিন। এ দুই দিন পাঠক-দর্শনার্থী-লেখক আর প্রকাশকের পদচারণে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। আগতরা আড্ডা-গল্প আর বই কিনে প্রিয় লেখকের সাথে সাক্ষাৎ, সেলফির সুযোগ নিয়েছেন। অন্য দিকে ক্রেতা আর দর্শনার্থীদের ভিড়ে হিমশিম খেয়েছেন বিক্রয়কর্মী থেকে প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা।
অমর একুশে বইমেলা ২৩তম দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ৬৭টি। বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা : প্রিভিলেজের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাওলী মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন রেহনুমা আহমেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের আমরা দেখেছি মিছিলের সম্মুখভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে স্লোগানে স্লোগানে সকল পর্যায়ে শামিল হয়েছেন। এই আন্দোলনে এমন কোনো ক্ষেত্রে ছিল না যেখানে আমরা নারীদের উপস্থিতি দেখতে পাইনি। কিন্তু আন্দোলন সফল হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসহ নানা পর্যায়ে নারীদের অনুপস্থিতি আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে। সমাজে বিদ্যমান আধিপত্যশীল পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি নারীর রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে অস্বীকার করে এবং দেশ গঠনের কাজে নারীর অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আকাক্সক্ষা পূরণ হবে না।
আলোচক বলেন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সকল গণ-অভ্যুত্থান একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। সেটি হলো নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ২৪-এর অভ্যুত্থানে নারীরা অসীম সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। এই আন্দোলন নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রেহনুমা আহমেদ বলেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা প্রচণ্ড সাহসের সাথে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করেই আমরা সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য ও ধর্মীয় বৈষম্য সমাধানের দিকে অগ্রসর হবো। তাহলেই আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- লেখক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া ও গবেষক তাহমিদাল জামি। শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল কবিতা আবৃত্তি, ‘নৃত্যালেখ্য, সঙ্গীত পরিবেশনা।
আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার চব্বিশতম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ : অমলেন্দু বিশ^াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করবেন মিলনকান্তি দে।
মেলায় এসেছে মিসকোটিং মুহাম্মাদ সা:। লেখক ড. জোনাথন এসি ব্রাউন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ (অনুবাদক)। প্রকাশক জ্ঞানকোষ প্রকাশনী। গঙ্গার পানি চুক্তি প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা। লেখক ড. তারেক শামসুর রেহমান (সম্পাদক)। প্রকাশক শোভা প্রকাশ। জ্যোতির্ময় জিয়া ও কালো মেঘের দল। লেখক আবদুল হাই শিকদার। প্রকাশক শোভা প্রকাশ। ‘গরম’ জলবায়ু ও গরম রাজনীতি। লেখক ফরিদা আখতার। প্রকাশক আগামী প্রকাশনী।