যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নোংরা খেলায় নেতানিয়াহু
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
হামাসের কাছ থেকে ইসরাইলি বন্দীরা মুক্তি পেলেও ইসরাইলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীরা মুক্তি না পাওয়ায় গাজার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শঙ্কা আরো গভীর হয়েছে। গত শনিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে ছয়জন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। কিন্তু এর বিনিময়ে ৬২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে গাজায় পাঠায়নি ইসরাইল। ইসরাইলের এমন সিদ্ধান্তকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যর্থ করতে নেতানিয়াহুর নোংরা খেলা বলে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তেমনি এটিকে ‘খুবই বিরক্তিকর’ বলেছেন নস যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের পরিচালক স্টিফেন জুনেস। আলজাজিরা ও রয়টার্স।
স্টিফেন জুনেস যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের পরিচালক। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্টত লঙ্ঘন।’ তিনি আরো বলেন, চুক্তির শর্ত মেনে ইসরাইলের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা সরবরাহ, তাঁবু, ভ্রাম্যমাণ ঘর, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিতে অনুমতি দেয়ার কথা ছিল। তাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরাইল। স্টিফেন জুনেস বলেন, ‘বিরক্তিকর বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র কখনোই যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পূরণে ইসরাইলকে চাপ দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো চাপ ছাড়া ইসরাইলেরও চুক্তিটি শেষ করার জন্য খুব বেশি উৎসাহ নেই।’
এই বিশ্লেষকের মতে, নেতানিয়াহুর এমন সিদ্ধান্ত ‘বিশ্বাসের ওপর আঘাত’। অন্তত এ মুহূর্তে যতটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট আছে। আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলতে গিয়ে স্টিফেন জুনেস বলেন, ‘যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়টি ইসরাইল পূরণ না করে, তাহলে তারা (ফিলিস্তিনিরা) কিভাবে জানবে যে ইসরাইলিরা চুক্তির পরবর্তী পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে?’
দীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস ধরে ইসরাইলের বর্বর হামলার পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৫ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় ৪২ দিনের। এ সময়ে মোট ৩৩ ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে এব হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়ার কথা। গত শনিবার হামাস চুক্তির শর্ত মেনে ছয়জন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ৬২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে গাজায় পাঠায়নি। এ বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া বন্দীদের ‘অপমানজনক অনুষ্ঠানের’ মাধ্যমে ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাই আপাতত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে না। রয়টার্স জানায়, গতকাল রোববার ভোররাতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান ছাড়া পরবর্তী বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত’ ইসরাইল ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে পাঠানোর অপেক্ষায় থাকবে।
নেতানিয়াহু ‘নোংরা খেলা’ খেলছেন : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যর্থ করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। শনিবার আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য বাসেম নাঈম এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি নস্যাৎ করতে নেতানিয়াহু ‘নোংরা খেলা’ খেলছেন।
হামাসের মতে, ইসরাইলি সরকার দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। আগামী ১ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পর্যায় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা হামাস ও ইসরাইলের। চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রথম পর্যায়ে আলোচনা করার কথা ছিল, যা ছয় সপ্তাহের মধ্যে গাজায় ১৫ মাসের নিরন্তর ইসরাইলি হামলার পর মানবিক সহায়তা পৌঁছানো, ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি ও গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, যদি দ্বিতীয় পর্যায় চূড়ান্ত হয়, তাহলে সমস্ত ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হবে। আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাসেম নাঈম আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আবারো এই চুক্তিকে ভণ্ডুল ও গুরুত্বহীন করার নোংরা খেলা চলছে। আর এ খেলার মাধ্যমে আবার নতুন করে যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হামাস চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং চুক্তি অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব তারা পালন করেছে।
তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গাজায় ঢুকতে দেয়া হয়নি এবং নেতজারিম করিডোর (গাজাকে উত্তর ও দক্ষিণে সংযোগকারী সরু পথ) থেকে সেনা প্রত্যাহার স্থগিত রাখা হয়েছে। গত মাসের শুরুর দিকে, ইসরাইলি কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন যে, হামাসের অভিযোগগুলো সঠিক। তবে ইসরাইলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হামাসের হাতে বন্দীর সংখ্যা : ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর মোট ২৫১ ইসরাইলিকে বন্দী করেছিল তারা। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, মোট ২৫১ জনের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি ও বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে ১৩৮ জন জীবিত, চারজন মৃত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছে। এ ছাড়া মৃত অবস্থায় ৪০ বন্দীর লাশ উদ্ধার এবং জীবিত অবস্থায় আট বন্দীকে উদ্ধার করেছে ইসরাইলি সেনারা। খবরে বলা হয়, হামাসের হাতে এখনো ৬১ জন বন্দী আটক রয়েছে; যাদের মধ্যে ৩১ জন মৃত বলে ধারণা করছে ইসরাইল। এসব বন্দীর মধ্যে পাঁচজন এমন বন্দী রয়েছেন, যারা ইসরাইলের বাসিন্দা নন। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন থাইল্যান্ডের, একজন নেপালের ও একজন তাঞ্জানিয়ার নাগরিক। এদের মধ্যে দু’জন (একজন থাইল্যান্ডের ও একজন নেপালের) জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা